সরকার প্রধানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়
ড. ইউনূসের চীন সফর নিয়ে রাষ্ট্রদূত
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৫, ১৯:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে সব দেশের সরকার প্রধানকে চীন সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকার একটি হোটেলে সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস (সিএ) ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’- শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের চীন সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট সরকার নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা চীনের নীতি। একইভাবে চীনের জনগণও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। বাংলাদেশ ও চীন পরীক্ষিত বন্ধু। ঐতিহ্যগতভাবে সব দেশের সরকার প্রধানকে চীন সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সফরে আগামী ২৬ মার্চ চীন সফরে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। পরদিন ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম কনফারেন্সে যোগ দেবেন তিনি। ড. ইউনূস সম্মেলনের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দেবেন। এছাড়া, চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধান উপদেষ্টার।
২৮ মার্চ বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। একই দিনে হুয়াই কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন তিনি। ২৯ মার্চ চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে এবং সেখানে তিনি বক্তব্য রাখবেন। ওইদিন বেইজিং থেকে চীনের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরার কথা ড. ইউনূসের।
দেশের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠবে বলে আশা রাখি।
চীনা গণতন্ত্রের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিটি দেশের নিজস্ব গণতন্ত্রের ধরন আছে। চীনেরও সেই ধরণ রয়েছে। চীনা গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য দেশের জনগণের কল্যাণ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই। চীন এই সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার ও এথনিক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছে। তবে এই সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্প্রদায়েরও যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
চীন বাংলাদেশ বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, জুলাই-আগস্টের পর ১৪ কোম্পানি ২৩০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের (সিএ) নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
ইমতিয়াজ আহমেদ জরীপ প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, ৫ হাজার ৩৩৫ জন জরিপে অংশ নিয়েছেন। জরিপে ৬০ শতাংশ লোক মনে করে চীনের বৈশ্বিক রাজনীতি উন্নয়নকেন্দ্রিক। উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ লোকের প্রথমেই মনে আসে চীনের কথা। আর ৫৩ শতাংশ লোক চীনে গিয়ে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। তবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নামে চীনা ঋণের ফাঁদ পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৪২ শতাংশ লোক মনে করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন সামান্য মাত্রায় কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন ও রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মহসিন বক্তব্য দেন।
আমার বার্তা/এমই