আ.লীগের অপরাধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া সিদ্ধান্ত
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

আওয়ামী লীগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জড়িত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইন–শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৩ তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ওই বৈঠকে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘মুজিববাদী সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে এবং এদের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দুর্গাপূজায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নাশকতা চালাতে পারে বলে গত রোববার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ১৪তম সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। অপরাধীরা গ্রেপ্তারের পর যাতে সহজে জামিনে ছাড়া না পায় সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সভায় জানানো হয়—রিকশা শ্রমিক, চাকরিচ্যুত বিডিআর ও আনসার সদস্য, পল্লি বিদ্যুতের কর্মীদের আন্দোলন, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, নার্স, আয়ুর্বেদিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বনাম বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, চা শ্রমিক এবং বেক্সিমকোসহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জনদুর্ভোগ এড়াতে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে অনুমোদন ছাড়া রাস্তাঘাট বা জনসাধারণের চলাচলের পথে সভা-সমাবেশ আয়োজন করা যাবে না। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে দেওয়া নির্দেশনাসমূহ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বেআইনি সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে বলা হয়।
সেগুলো হলো—বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে কোনো ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি বা অপরাধী যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া, অভিযান পরিচালনার সময় নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা করতে হবে। কেবলমাত্র প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এই অভিযানের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে না পারে, সে বিষয়েও কঠোর নজরদারি করতে হবে।
সভার সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে করতে হবে।
সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও তৎপরতা অবলম্বন করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়কে (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও ঢাকা-যমুনা সেতু মহাসড়ক) সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার বিষয়ে বলা হয়। জনদুর্ভোগ এড়াতে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোনোরূপ অনুমতি ব্যতিরেকে রাস্তা বা জনসাধারণের চলাচলের পথে সভা-সমাবেশ আয়োজন করা যাবে না। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে দেওয়া নির্দেশনাসমূহ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দল, মত, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে দ্রুত ও যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা মহানগরী এলাকায় যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজনীয় উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
সার্বিক বিসয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিবে রুটিন দায়িত্ব পালনকারী অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা মুজিববাদী বুঝি না। একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পক্ষে যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। দেশের পূজামণ্ডপে আজ বুধবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা
আমার বার্তা/জেএইচ