ধর্ষণের মামলায় ভুক্তভোগীকেই আলামত দিতে হয়, যা নির্যাতনের সামিল

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণবিরোধী মিছিলে গুলি চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে নতুন করে ন্যায়বিচার ও আইনি সংস্কারের দাবি জোরদার হয়েছে। ধর্ষণের মামলায় এখনো ভুক্তভোগীকেই আলামত দিতে হয়, যা অন্যায় ও নির্যাতনের সামিল। অপরাধীর ওপরই প্রমাণের দায় চাপাতে হবে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা। খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণ এবং প্রতিবাদকারী বিচার প্রার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 

মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, খাগড়াছড়ির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচারের দাবি জানানোর জবাবে গুলি চালানোর মতো ঘটনা এই দেশে আগে কখনো ঘটেনি। এটি শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, ন্যায়বিচারের দাবি জানানো ও প্রাপ্তির পথে এক ভয়াবহ বাধা। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ধর্ষণ একটি ক্রিমিনাল অপরাধ, এর জন্য আইন থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের বিচারের জন্য জনগণকে রাস্তায় নামতে হয়। এখনও ধর্ষণের মামলা করতে গেলে নির্যাতনের শিকার নারীকে আলামত দিতে হয়। নির্যাতনের শিকার নারী কেন আলামত দেবে, ধর্ষণকারী প্রমাণ করবে তিনি ধর্ষণ করেছেন কি করেননি। 

তিনি বলেন, আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমরা নারীর মর্যাদা সংরক্ষণের আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, সেই শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একইসাথে, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের এই প্রতিবাদ থেমে থাকবে না।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অপরাধীরা বরাবরের মতো এখনও পার পেয়ে যাচ্ছে এটি আমাদের জন্য গভীর হতাশার বিষয়। ন্যায় বিচার না পেয়ে যখন এলাকাবাসী ন্যায়বিচারের দাবিতে ফুসে উঠলো, তখন দেখা গেল প্রতিবাদকারীদের ওপরেই হামলা চালানো হলো, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঘটলো। কিন্তু একটি নিরীহ কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কোথায় ছিল, এই প্রশ্ন আজ প্রত্যেকের মনে জেগে উঠেছে। গণধর্ষণের শিকার এই কিশোরীর দায়িত্ব কে নেবে, কিভাবে নেবে? 

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংঘঠিত এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা সত্যকে আড়াল করে জনগণের সামনে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে হবে এবং প্রকৃত সত্য সকলের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসাথে, যারা প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা চালিয়েছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি।

মানববন্ধনে অন্যরা বলেন, খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীর সাথে যে ঘটনা ঘটেছে আবারো তা এটিই প্রমাণ করে পার্বত্য অঞ্চলের জাতি সত্তাভিত্তিক নারী ও কিশোরীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। খাগড়াছড়ির এ ঘটনায় যে কেবল এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে তা নয়, এটি শুধু একজন মেয়ে কিংবা মারমা কিশোরীর ওপর নয়, সমগ্র নারীজাতী ও মানবতার ওপর আঘাত।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নারী প্রগতি সংঘের সেলিনা পারভিন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযান ও বিএনপিএস, ব্লাস্ট, ট্রেড ইউনিয় কেন্দ্র এবং নারী প্রগতি সংঘের প্রতিনিধিরা।


আমার বার্তা/এমই