প্রথমবার বাংলাদেশ-কুয়েতের রাজনৈতিক পরামর্শ, সম্পর্ক জোরদারে অঙ্গীকার

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

বাংলাদেশ ও কুয়েত প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সভায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, শ্রম, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে একমত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও কার্যকর ও ভবিষ্যতকেন্দ্রিক অংশীদারিত্বে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যেই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

রোববার (১৯ অক্টোবর) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বৈঠকের বিস্তারিত জানানো হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপক্ষীয় (বাইলেটারাল) সম্পর্ক বিভাগের সচিব ড. মো. নাজরুল ইসলাম এবং কুয়েতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা জোহর হায়াত।

সভায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা এক উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অংশ নেন। তারা ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কুয়েতের স্বীকৃতি এবং ১৯৭৪ সালে ওআইসি সদস্যপদে সমর্থনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক সম্পর্ককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা সম্মত হন যে, প্রতি দুই বছর অন্তর ঢাকায় ও কুয়েত সিটিতে পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের সফর ও সরকারি, বেসরকারি, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে নিয়মিত বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনার সময় বাংলাদেশ কর্তৃক ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন’-এ অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করা হয়। দুই দেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সামরিক প্রশিক্ষণ ও সাইবার নিরাপত্তার মতো খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়।

শ্রম খাতে কুয়েত ভিশন ২০৩৫-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনিষ্পন্ন সমঝোতা স্মারকগুলো দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

অর্থনীতি ও বিনিয়োগ খাতে, জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি এবং হালাল খাদ্য খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে চায় উভয় দেশ। বাংলাদেশ কুয়েতি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানায়।

২০২৬ সালে বাংলাদেশ-কুয়েত ব্যবসায়িক ফোরাম আয়োজন এবং যৌথ বাণিজ্য কমিটি পুনরায় সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি, কুয়েত ফান্ড ফর অ্যারাব ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্টের (KFAED) চলমান সহায়তায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

দুই দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো এবং বিমান যোগাযোগ উন্নয়নের মতো নতুন খাতেও যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানায়।

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা আনতে চায় বাংলাদেশ ও কুয়েত। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও কুয়েত ডিপ্লোম্যাটিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়। একই সঙ্গে দুই দেশের কূটনৈতিক এলাকায় প্লট বিনিময় প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক পরিসরে দুই দেশ জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC) এবং অন্যান্য বহুপক্ষীয় মঞ্চে একে অপরকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কুয়েতের রোহিঙ্গা সংকটে সহানুভূতিশীল অবস্থানের জন্য। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল (UNHRC), ইউনেসকো ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাতে (IAEA) কুয়েতের প্রার্থিতার প্রতি সমর্থন জানায়।


আমার বার্তা/জেএইচ