আনিস আলমগীরকে আজকের কাগজের প্রোডাক্ট আখ্যাসহ ধুয়ে দিলেন প্রেস সচিব
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৫০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

স্বঘোষিত ‘স্পষ্টভাষী’ সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ‘আজকের কাগজের প্রোডাক্ট’ আখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বলেছেন, ‘তিনি সেই সাংবাদিক প্রজন্মের অংশ, যারা তথ্যের সঠিক সোর্সিং নিয়ে কখনো সিরিয়াস ছিল না। তার সবচেয়ে ‘খ্যাতনামা’ কাজ ছিল বাগদাদের একটি হোটেল রুমে বসে ‘ইরাক যুদ্ধ কভার’ করা—হোটেলের বাইরে না গিয়েই রূপকথার মতো যুদ্ধ রিপোর্ট লেখা’।
পাশাপাশি প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে ছড়ানো মিথ্যা তথ্যের বিষয়ে প্রমাণ দেখানোর দাবি জানান তিনি।
সোমবার (১০ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে প্রেস সচিব এ দাবি জানান।
দীর্ঘ ওই পোস্টে শফিকুল আলম আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোতে ভুল উদ্ধৃতি যেন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি গুরুতর সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত অপরাধ। আর এমন অপরাধে সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের প্রধান এবং তাদের অন্যতম শীর্ষ সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে।
কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে এই শিল্পের সবচেয়ে বড় নামগুলোও এ অপরাধে দোষী।
প্রেস সচিব বলেন, সেদিন একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিক আমার বক্তব্যের নানা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভুলভাবে উদ্ধৃত করেছিল। লেখাটি পড়ে আমার মনে হলো রিপোর্টার যেন কোনো এআই ট্রান্সক্রিপশন টুল দিয়ে আমার বক্তৃতা চালিয়ে দিয়েছে। যার ফলে বেরিয়ে এসেছে একগাদা যান্ত্রিকভাবে গুলিয়ে ফেলা অর্থহীন বাক্য—কিছু অংশ অবশ্য মজার ছিল, তবে বেশিরভাগই হতাশাজনক। যেমন- আমি যখন ‘টাচ’ নিয়ে বলছিলাম, সফটওয়্যারটি বুঝে নিয়েছিল ‘কাজ’! আর পত্রিকাতেও ছাপা হয় ‘কাজ’ শব্দটাই!
‘সমস্যা এখানেই থামেনি। কয়েকটি অনলাইন পোর্টালও সেই ভুল উদ্ধৃতিকে হুবহু কপি করে প্রকাশ করেছে’, যোগ করেন তিনি।
এমনটা প্রতিনিয়তই ঘটছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আমার ক্ষেত্রে এমনটি প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। নতুন চাকরির প্রথম কয়েক মাস আমি সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ফোন করে সংশোধনের দাবি জানাতাম। এখন আর তা করি না। সত্যি কথা বলতে, এখন আসলে সময় নেই।
ফটোকার্ডকে ‘সবচেয়ে বড় বিপদ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এখন আরও বড় বিপদ হলো ফটোকার্ড। প্রতিদিন পত্রিকাগুলো—বিশেষ করে বাসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন এবং বিএনপিমনা সাংবাদিকদের দ্বারা প্রভাবিত কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন টিভি স্টেশন ও ওয়েবসাইটগুলো এসব গ্রাফিক্স কার্ড বানায়, যেখানে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের কথার অংশ ছেঁটে ‘সেনসেশনাল’ করে উপস্থাপন করা হয়।
‘দুয়েকটি বাক্য বেছে নিয়ে প্রসঙ্গহীনভাবে প্রকাশ করে, তারপর সেই বাক্যটি ঘিরে পুরো গল্প বানিয়ে ফেলে। যেমন- সম্প্রতি সিআইআরডিএপি-তে আমি ২৭ মিনিটের বক্তৃতা দিয়েছিলাম। তারা পুরো বক্তব্য বাদ দিয়ে মাত্র একটি লাইন তুলে দিয়ে গোটা সংবাদটা বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে’, যোগ করেন শফিকুল আলম।
‘টিভি বিশ্লেষক ও ইউটিউবাররা আরও ভয়াবহ’ উল্লেখ করে প্রেস সচিব আক্ষেপ করে বলেন, ‘তারা পুরো প্রতিবেদনটা পড়ে না, বক্তৃতাও শোনায় বা দেখায় না। আগে থেকেই একটা ধারণা নিয়ে আসে—কয়েকটি সত্যের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ মিথ্যা মিশিয়ে দীর্ঘ মনোলগ বানায়। এছাড়া কিছু ইউটিউবার প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুল তথ্য প্রচার করছে। এরা তো গবেষণা করেই না, আবার প্রশিক্ষিত ফ্যাক্ট-চেকারও না। যার ফল- অন্তহীন ভুল বিশ্লেষণ।
তিনি বলেন, তাদের কিছু দাবি এতটাই বেপরোয়া যে বিস্মিত হতে হয়। এক নারী ইউটিউবার একবার অভিযোগ তুলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার সঙ্গে তোলা প্রফেসর ইউনূস ও তার মেয়ের ছবিটি নাকি ‘ম্যানিপুলেটেড’। অথচ ছবিটি প্রকাশ করা হয় খোদ হোয়াইট হাউস থেকেই।
তিনি যখন দাবিটি করেছিলেন, আমরা তখনো নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলাম। অর্থাৎ তিনি মূলত বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে থাকা স্টাফদেরই অভিযুক্ত করছিলেন, ‘হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ছবি’ বিকৃত করার জন্য! কতটা হাস্যকর! আমি ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করলে তার স্বামী—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মিডিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক—স্ত্রীর সমর্থনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভাবুন তো—হাসিনাকে নিয়ে যদি এমনটাই করতেন!
আরও এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘সেদিন স্বঘোষিত ‘মুক্তমনা’ সাংবাদিক আনিস আলমগীর দাবি করলেন, প্রফেসর ইউনূস নাকি জুলাই আন্দোলনের সময় বিদেশি মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করতে কোটি কোটি টাকা দিয়ে পিআর এজেন্সি ভাড়া করেছিলেন।
তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ‘ইমেইল ইন্টারভিউ’—যার সত্যতা নিয়েও সন্দেহ আছে—সেগুলো নাকি স্বতঃস্ফূর্ত ও বিনামূল্যের! একজন গণহত্যাকারী নাকি কোনো পিআর সাহায্য ছাড়াই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিশ্চিত করেন—এটি সত্যিই হাস্যকর’।
আনিস আলমগীরের দাবি পক্ষে প্রমাণ দেখানোর দাবি জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘সত্য হলো—প্রফেসর ইউনূস কখনো কোনো পিআর এজেন্সিকে এক পয়সাও দেননি সাক্ষাৎকারের জন্য। যদি আনিস আলমগীরের কাছে প্রমাণ থাকে, তিনি যেন তা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক জামায়াত কর্মকর্তা কয়েক মাস আগে একই অভিযোগ করেছিলেন, আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি উত্তর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—যা আজও আসেনি’।
আনিস আলমগীরকে ‘আজকের কাগজের প্রোডাক্ট’ আখ্যা দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আজকের কাগজ থেকে উঠে আসা আনিস আলমগীর সেই সাংবাদিক প্রজন্মের অংশ, যারা তথ্যের সঠিক সোর্সিং নিয়ে কখনো সিরিয়াস ছিল না। তার সবচেয়ে ‘খ্যাতনামা’ কাজ ছিল বাগদাদের একটি হোটেল রুমে বসে ‘ইরাক যুদ্ধ কভার’ করা—হোটেলের বাইরে না গিয়েই রূপকথার মতো যুদ্ধ রিপোর্ট লেখা’।
এরপরই তিনি বিবিসির প্রধান সম্পাদক ও সাংবাদিকের পদত্যাগের বিষয়ে বলেন, ‘গতকাল যখন বিবিসির প্রধান সম্পাদক ও একজন সিনিয়র সাংবাদিক ট্রাম্পের একটি বক্তব্য ভুল উদ্ধৃত করার দায়ে পদত্যাগ করলেন, তা বিশ্বজুড়ে খবর হলো। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে নিয়মিতই মানুষকে ভুল উদ্ধৃতি দেওয়া হয়—বা প্রসঙ্গবিহীন উদ্ধৃতি—এবং প্রতিবাদ করলে সাংবাদিকরা ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। আপনাকে ভয় দেখানো বা অসহিষ্ণু বলে অভিযুক্ত করে, আর মুহূর্তেই আপনাকে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের সঙ্গে তুলনা করে।
শেষটায় আক্ষেপ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘এটাই আজকের বাংলাদেশের মিডিয়ার অবস্থা—অবহেলাপূর্ণ, জবাবদিহিহীন এবং সত্য থেকে বিপজ্জনকভাবে বিচ্ছিন্ন’।
আমার বার্তা/এমই
