অর্থনীতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো হচ্ছে: শফিকুল আলম
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন অগ্রগতিকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, সরকারের অর্জন ও বাস্তব চ্যালেঞ্জের সঠিক চিত্র উপস্থাপনের বদলে অনেক ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিকৃত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে- যা জনমানসে ‘মিশ্র ও ভ্রান্ত বার্তা’ তৈরি করছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ২০২৫ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, গত ১৬ মাসে আমরা দেখেছি অনেক গণমাধ্যম ও আলোচক অত্যন্ত বেছে নেওয়া ডেটা ব্যবহার করে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন, যাতে প্রকৃত পরিস্থিতির বিকৃত চিত্র উঠে আসে। এতে জনগণ ভুল বার্তা পাচ্ছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, অনেক সময় ‘টিনি গ্রুপ’ বা অল্পসংখ্যক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বক্তব্য অতিরিক্ত গুরুত্ব পায়, অথচ দেশের বৃহৎ অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সরকারের নীতিগত কাজগুলো আলোচনার বাইরে থাকে।
কিছু ব্যবসায়ী নেতার বক্তব্য উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কেউ কেউ এমন ভাষায় কথা বলছেন যেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী নিধনের সময়ের সমান। এমন মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়- এটি বাস্তবতার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
চাকরির সংকট থেকে শুরু করে বিনিয়োগ ও উৎপাদন- সব ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিকে অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এফিশিয়েন্ট না হলে বাংলাদেশে নতুন চাকরি তৈরি সম্ভব না। প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, বন্দরের অদক্ষতার কারণে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার ডলারের ক্ষতি হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে যথেষ্ট সমর্থন দিচ্ছে না।
গ্যাস সংকট বা বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো বিষয়েও অনেকে অতিরঞ্জিত অভিযোগ তোলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডেটা স্পষ্টভাবে দেখায়, বর্তমান সরকার গ্যাস সাপ্লাই বাড়িয়েছে। ১০০% পূরণ না করতে পারলেও বাস্তব কারণ আছে। কিন্তু যেভাবে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সিভিক ফোরামের উপযোগী নয়।
দারিদ্র্যের হার নিয়ে আলোচনায় ভুল ব্যাখ্যা ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, যেভাবে বলা হচ্ছে যেন দারিদ্র্য হঠাৎ ২০% থেকে ২৮% হয়ে গেছে এবং তা এই সরকারের সময়েই ঘটেছে- এটি সম্পূর্ণ ভুল ফ্রেমিং।
তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ডেটা অনুযায়ী- সাম্প্রতিক অর্থবছরের শেষে দারিদ্র্যের হার ২০–২১% এবং চলতি বছরে তা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রতিদিন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অর্থনৈতিক টিম গড়ে দেশকে আবার প্রবৃদ্ধির পথে আনার জন্য কাজ করছেন। কিন্তু মিক্সড মেসেজিংয়ের কারণে এই অর্জনগুলো যথাযথভাবে সামনে আসছে না।
তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয়ে সত্যিকার অর্থে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে- সেগুলো বললে সমস্যা নেই। কিন্তু যেসব বিষয়ে সরকারের দায় নেই সেগুলোও সরকারের ওপর চাপানো হচ্ছে, যা হতাশাজনক।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের ইকোনমি বুঝতে গেলে পলিটিক্যাল ইকোনমি বুঝতে হবে। চাঁদাবাজির মধ্যে দিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা চাঁদাবাজদের হাতে চলে যায়। যখন এই অবস্থা থাকবে তখন বেশি গ্রোথ আশা করা যায় না। এজন্য ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি রোধ করার জন্য সাপ্লাই চেইনে যে পরিবর্তন করা দরকার সেটা অনেক সময় লাগবে।
আমার বার্তা/এমই
