জন্মদিনের শুভেচ্ছাঞ্জলি

আবদুল্লাহ আল মোহন: মঙ্গল প্রত্যাশা জাগানো আজন্মের শিক্ষক

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  সিরাজুল কবির সাকিব

প্রিয় শিক্ষাবিদ, সমালোচক, গবেষক ও লেখক আবদুল্লাহ আল মোহনের জন্মদিন ১০ ফেব্রুয়ারি। শুভ জন্মদিন স্যার। জন্মদিনে আপনাকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা,সেই সাথে কামনা করি আপনার আনন্দময়, সুস্থ ও সুন্দর আগামীর দিন।

শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মোহন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ভাসানটেক সরকারি কলেজে। সোনালী ব্যাংকের আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি ছেড়ে ২৫ বিসিএস-এর মাধ্যমে যোগদান করেন শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ক্লাসের লেখাপড়ার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আছেন শিক্ষকতার শুরু থেকেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে শিক্ষকতার শুরু করেপদোন্নতির পরবর্তমানে ভাসানটেক সরকারি কলেজ,ঢাকায় সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। গবেষক, লেখক হিসেবেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন আবদুল্লাহ আল মোহন। মানসিক স্বাস্থ্য, ভ্রমণ কাহিনী ও অনুপ্রেরণামূলক জীবনী লিখে শিক্ষার্থী, পাঠকদের হৃদয় জয় করেছেন।

পাবনার যমুনা পাড়ের নগরবাড়ী ঘাটের ‘যমুনাপুত্র’আবদুল্লাহ আল মোহনের জন্ম ১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। শিক্ষা জীবনেলেখাপড়া করেছেন ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় (নাটিয়াবাড়ি, বেড়া, পাবনা), ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সরকারওরাজনীতি’বিভাগথেকেঅনার্সওমাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিভিন্ন পাঠচক্রের নিয়মিত সদস্য এবং কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একান্ত সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বিশ্ববরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের জাদুদলের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন বহুদিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরোটা সময়ই কাজ করেছেন তৎকালীন বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ভোরের কাগজে। এরপর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার প্রশিক্ষণ বিভাগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকেও কাজ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত পছন্দের শিক্ষকতাকেই প্রধান কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন।

“মঙ্গল আসর”শিক্ষকমোহনস্যারেরঅন্যতমপরিচয়

শিক্ষার্থীদেরনিয়েআলোচিতসৃজনশীলসহশিক্ষারআনন্দময়আয়োজন‘মঙ্গলআসর’পরিচালনাকরেআসছেন

শিক্ষার্থীদেরপাঠ্যবইয়েরপাশাপাশিবাস্তবসম্মতসৃজনশীলশিক্ষাপ্রদানেরজন্যমঙ্গলআসরসুপরিচিতি লাভ করেছে।মঙ্গল আসরের অন্যতম কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বই পাঠ, আলোচনা ও সার-সংক্ষেপ উপস্থাপনা। নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেপত্রিকা পাঠ, বই বিনিময়, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা, ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ নিদর্শন, বই মেলা ভ্রমণ, বৃক্ষ মেলা ভ্রমণ আসরের অন্যতম কর্মসূচি। ‘মানবিক ও যুক্তিবাদী মানুষ চাই, করি দৃঢ় অঙ্গীকার, গড়ি ঘরে ঘরে পাঠাগার’চেতনাকেধারণকরেগ্রন্থাগারগড়েতোলারআন্দোলনচালিয়েযাচ্ছেনতিনি।মঙ্গল আসরের শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা দেওয়া হয় প্রত্যেকের বাসায় কী কী বই আছে তা নিয়ে। তারপর সে তালিকায় প্রয়োজনীয় যে সকল বই দরকার তা ধীরে ধীরে সংগ্রহ করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বাসায় একটি করে পাঠাগার তৈরির কার্যক্রম চলে। এভাবে সকল শিক্ষার্থীরা তাদের বাসায় একটি করে পাঠাগার গড়ে তোলার কাজে লিপ্ত থাকে বছরজুড়েই। সরাসরি উপস্থিতিতে এবং জুম মাধ্যমে অনলাইনেও চলে মঙ্গল আসরের নিয়মিত কার্যক্রম। ‘দেশ আমার দায়িত্ব আমার’প্রেরণাজোগানো অনুকরণীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘মোহনেরমঙ্গলআসর’।

প্রিয় মোহন স্যারকে নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে স্যার সব সময় আমাকে মনে করিয়ে দেন, ‘কিছু না কিছু করে জীবন কেটেই যাবে, এই জীবন আর কতটুকু, এমন কিছু করা চেষ্টা কর যা মৃত্যুর পরও তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের নানা অসঙ্গতি, গোজামিলের বিষয়ে সোচ্চার কণ্ঠস্বর মোহন স্যার। শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে, ইচ্ছাশক্তিকে প্রবল করতে সামাজিক মাধ্যমেও নেতিবাচক কনটেন্টের বিপরীতে ইতিবাচক কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছেন। সফল মানুষ আর বিখ্যাত মনীষীদের স্মরণ করে তিনি ফেসবুকে তাদের জীবন ও কর্ম তুলে ধরছেন নিয়মিতভাবে প্রতিদিন। আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তৈরি করে ভবিষ্যত কর্মজীবনের অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মোহন স্যারের মতো শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়ে আমার মতো আরো অনেকেরই শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় যোগদানের ইচ্ছা রয়েছে।

কেবলমাত্র মানুষ গড়ার মহান শিক্ষক হিসেবেই নন, আমার কাছে আবদুল্লাহ আল মোহন স্যার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন গবেষকও। মোহন স্যার বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী, লেখক, গবেষকদের নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে থাকেন। প্রকাশিত হয়েছে বিশটির মতোন গ্রন্থ।এবারের বইমেলায় ‘জীবনজয়ী জিনোম বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম’ ও ‘চিকিৎসা পদার্থবিদ্যার বিশ্ববাঙালি ড. গোলাম আবু জাকারিয়া’কে নিয়ে তাঁর দুটিজীবনী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই বইমেলাতেই প্রকাশিত হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মনোবিদ রাশনা রশীদের সাথে যৌথভাবে লেখা ‘ঈর্ষা নয় ঈর্ষনীয় হই’মূল্যবানগ্রন্থটিও। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ও আত্মহত্যার মত সামাজিক ব্যাধি রোধের জন্য “ব্যর্থতায়সফলযারা”এবং“আত্মহত্যানয়, আত্মবিশ্বাসে বাঁচি”শিরোনামেরগুরুত্বপূর্ণগ্রন্থদুটিও তারই রচিত। পরিশেষেআবারো জন্মদিনে প্রিয় মোহন স্যারের সুস্থ ও আনন্দময় দীর্ঘায়ু কামনাকরি।

লেখক: সিরাজুল কবির সাকিব শিক্ষার্থী, মাস্টার্স শেষ বর্ষ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা