রিজভী

দুর্ভিক্ষ আসলে সেটা হবে শেখ হাসিনার জুলুমের ফসল

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী : ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যদি দুর্ভিক্ষ আসে, সেটা হবে শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্র ও জুলুমের ফসল।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে, শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) কোটালীপাড়ায় দেওয়া এক বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি মার্চের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।’

এমন বক্তব্যের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকার দেশের সমস্ত সম্পদ লুট করে রাজকোষ খালি করে ফেলেছে। আমদানি করার মত ডলার নাই। এলসি বন্ধ। সব টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ। আর ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে রিজার্ভ।’

তিনি বলেন, ‘বিনা ভোটে ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছেন, দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার গল্প শুনিয়েছেন। আর এখন বলছেন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে বিএনপি! কী হাস্যকর কথা! বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা বোকা, অবুঝ-নাদান মূর্খ মনে করে।’

রিজভী বলেন, ‘গুম, খুন, লুটপাট, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, চাপাবাজি, মিথ্যাবাজি, সীমাহীন মূল্যস্ফীতি, ধোঁকাবাজির হাত থেকে রেহায় পেতে এখন ‘উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর ফন্দি আটছে সরকার। শেখ হাসিনা দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বে অসহায় হয়ে পড়েছেন। নিজের অপব্যবস্থাপনা আর ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি ও বিদেশিদের ওপর অগ্রিম দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘তিন মাস চলার মতো রিজার্ভ অবশিষ্ট আছে। তারপর দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। সারাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।’

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর দুর্ভিক্ষ একে অপরের পরিপূরক। আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ আর দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে দুর্ভিক্ষ আনে। ৭৪’ সালে যেভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার অবিচার অনিয়মের কারণে দেশে এখন আবারও সেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। এবার যদি দুর্ভিক্ষ আসে, তাহলে সেটা হবে শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্র ও জুলুমের ফসল।’

‘তাই আজ ভোটাধিকার, গুম-খুন-অপহরণ-জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের জনগণ রাজপথে মরণপণ লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়লাভ করতেই হবে’- বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘গুম, খুন, অপহরণ করে, গোপন বন্দীশালা ‘আয়নাঘর’ বানিয়ে, কারারুদ্ধ করে বিনাভোটে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত করেছেন। আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং সমালোচনা সত্ত্বেও সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গত দেড় দশকে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬৪৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ৩ জনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নাই এবং ১৬১ জনের এখন পর্যন্ত কোনো খ্জোঁ পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরুর মতো সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, হুমায়ূন পারভেজ, জাকির, সুমন, দিনার, জুনেদসহ অসংখ্য বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকে অদৃশ্য করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যদিও আমাদের হিসেবে-প্রকৃত সংখ্যা আরও তিন থেকে চার গুণ বেশি। কারণ, এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে কেবলমাত্র গুম হয়ে যাওয়া পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট এর ভিত্তিতে, আর অনেক আতঙ্কিত পরিবারই রিপোর্ট করার সাহস পায়নি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬৩দিন গুম করে চোখ বেধেঁ ভারতে ফেলে আসে। এরপর তাকে সেখানে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ হাসিনার গুমের ইতিহাসে সেটি আরেকটি নজিরবিহীন ঘটনা।’


আমার বার্তা/এমই