অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ১৩ প্রস্তাবনা

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নাটমণ্ডল মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সভা।

দেশের বর্তমান সংকট নিরসন ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নাটমণ্ডল মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আয়োজনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস: পর্যালোচনা, প্রস্তাব ও মতবিনিময়’ শীর্ষক সভায় এ ১৩ প্রস্তাব জানানো হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন গবেষক মাহা মির্জা, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সুফি দার্শনিক কাজী জাবের আহমেদ, চলচ্চিত্রকর্মী আকরাম খান প্রমুখ।

গবেষক মাহা মির্জা এই ১৩ প্রস্তাবনা পেশ করেন। এ সময় তিনি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের তালিকা প্রকাশ করে তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া, হত্যাকারীদের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

অন্যান্য দাবিগুলো হলো—সংবিধান কমিশনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা প্রকাশ করা এবং জনমতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা। অবিলম্বে মব ভায়োলেন্স বা দলগত সহিংসতা, খুন, ভাঙচুর, ত্রাস সৃষ্টি; মন্দির, মাজার, মসজিদ, কবরস্থান, শিল্পকর্ম, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্নজনের বাড়িঘরে হামলারোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জড়িতদের বিচার করা। সাইবার সিকিউরিটি এ্যাক্ট, ৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন ও শ্রমিক পরিষেবা বিলসহ মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করা।

খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ঘোষণা, শ্রমিক হত্যার বিচার করা এবং শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সকল ন্যায্য দাবি পূরণে মালিকদের বাধ্য করা। প্রকৃতি ও কৃষকবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন করা। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, সন্ত্রাসী দখলদারী তৎপরতা বন্ধ করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং পাবলিক হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ শুরু করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেনাশাসন প্রত্যাহারের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা। মানবপাচার ও প্রবাসে বাংলাদেশি নারী-পুরুষের নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশেষায়িত সেল গঠন করা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইইউ, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি প্রকাশ এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

সভাপ্রধানের বক্তব্য প্রধানকালে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার যদি জনগণের দিকে ঘাড় ফেরান, তাহলে দাবিগুলোর বাস্তবায়ন সহজ। সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় রয়েছে। সরকারের এত সোর্স থাকার পরও আহত ও নিহতদের তালিকা বের করতে এত সময় কেন লাগছে! এটা এত কঠিন কিছু নয়। নিহতদের পরিবারকে কেবল এক লক্ষ টাকা ধরিয়ে না দিয়ে তাঁদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাদর্শের ওপর যে হামলা হচ্ছে সেটা দমন করার বিষয়ে সরকারের কণ্ঠে জোর নেই। এই যে সময়গুলো চলে যাচ্ছে, দেশের জন্য এটা বিপজ্জনক। ফলে স্বৈরশাসকদের সুবিধা হচ্ছে, সুবিধা হচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের। অনতিবিলম্বে এসব বন্ধে সরকারকে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে ছাত্রসংসদ চালু করা, সামাজিক-সাংস্কৃতিকর সংগঠন চালু করার কথাও জানান আনু মুহাম্মদ।


আমার বার্তা/এমই