গণহত্যায় অভিযুক্ত আ.লীগের কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না
নির্বাচন নিয়ে এনডিএমের প্রস্তাবনা
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:
দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ এং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
তাদের সেই প্রস্তাবনায় জানিয়েছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুথানে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের পদধারী কেউ বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবে না।
প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করা অসম্ভব। সুতরাং সংবিধানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিধান অন্তর্ভূক্ত করতে হবে যেখানে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো থেকে একজন করে মনোনীত প্রতিনিধি (যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না) থাকবে। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে। তবে নির্বাচন পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন।
২. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখা
স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনকে দলীয় প্রতীক মুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচনকালীন সহিংসতা এবং এলাকাভিত্তিক প্রভাব তৈরির সুযোগ বন্ধ করার স্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভা নির্বাচন একই তফসিলের অধীনে একদিনে অনুষ্ঠিত করতে হবে। এই নির্বাচনে প্রচারণাকালীন সময়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভোটগ্রহণের দিন গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার থাকবে।
৩. নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন
• প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টর’ ভূমিকায় রাখতে প্রয়োজনীয় আইন এবং বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান ব্যতীত অন্য যেকোন সদস্যকে আচরণবিধি লঙ্ঘণ বা প্রভাববিস্তারের অভিযোগে কারণ দর্শাতে পারবেন এবং নির্বাচনে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে পারবেন। নির্বাচনী আইনপ্রয়োগের পূর্ণ এখতিয়ার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের থাকতে হবে।
• গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে জাতীয় নির্বাচন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বাতিলের এখতিয়ার ইসির থাকতে হবে।
• নির্বাচনী বাজেট প্রণয়ন এবং অর্থপ্রাপ্তির স্বাধীনতা ইসির থাকবে তবে চিফ কম্পোট্রলার অব অডিটের অধীনে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ব্যয় সংক্রান্ত নিরপেক্ষ অডিট সম্পন্ন হতে হবে।
• জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগের পূর্ণ এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকতে হবে।
• জাতীয় নির্বাচনের ৩ মাস আগে নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে প্রশাসনের অন্তত ৪ বছর আগে অবসরে যাওয়া সচিব পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
• নির্বাচকালীন সময়ে জনপ্রশাসন, পুলিশ, এসবি এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থায় যেকোন রদবদলে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।
• সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, সংবিধান লঙ্ঘন বা গণহত্যার প্রমাণিত অভিযোগে যেকোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করার পূর্ণ এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের থাকতে হবে।
• নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি কর্তৃক শক্তিশালী ভ্রাম্যমান পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করতে হবে, যাদের প্রার্থীতা বাতিলের এখতিয়ার থাকবে।
• নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আপিল ট্রাইবুনাল নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত হতে হবে।
• নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ব্যতীত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হতে হবে।
৪. নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার
• ক্ষমতার ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা করতে হবে।
• সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্যরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত হবেন এমন বিধান রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ভোটের দিন উচ্চকক্ষের জন্য শুধুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীক সংবলিত আলাদা একটি ব্যালট রাখতে হবে।
• আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান পদ্ধতি অনুসরণ করে হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যালটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, তবে ভবিষ্যতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে পেপার অডিট ট্রেইল রাখতে হবে।
• একাধিক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বিধান চালু করতে হবে।
৫. নির্বাচন পরিচালনা পদ্ধতি সংস্কার
• রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাগরিক সমাজের যোগ্য প্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
• জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত ৬০ দিন আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতি আসনের বিপরীতে সর্বচ্চো ৩ জন প্রার্থীর নাম হলফনামাসহ নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। প্রত্যেক প্রার্থী হলফনামা যাচাইয়ের জন্য একটি খরচ ইসিতে জমা করবেন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাই করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীর হলফনামার তথ্যে গরমিল থাকলে প্রার্থিতা বাতিল হবে।
• জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ব্যয়সীমা বর্তমান বাস্তবতায় সর্বচ্চো ৪০ লাখ টাকা করতে হবে।
৬. প্রার্থীতা সংক্রান্ত বিধিমালার সংস্কার
• কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেন্দ্র বা মহানগর/জেলা এবং পৌরসভা/উপজেলা পর্যায়ের কমিটি থেকে পদত্যাগের পর অন্তত ৯০ দিন অতিবাহিত না হলে কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।
• সরকারি চাকরি থেকে অবসরের ৪ বছর পূর্বে কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবে না।
• ২৪ এর গণঅভ্যুথানে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের পদধারী কেউ বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবে না।
• স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিধান বাতিল করতে হবে।
৭. ভোটগ্রহণের দিন প্রয়োজনীয় আইন এবং বিধিমালা
• প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
• প্রতি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্র থেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাউড স্পীকারে ঘোষণা করতে হবে।
• কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফলে প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষরসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
• ভোটকেন্দ্র স্থাপনে দূরত্ব এবং জনমতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
• ভোটকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ভোটগ্রহণের দিন যেকোন গোলযোগের ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে দায় নিতে হবে।
আমার বার্তা/এমই