দুই আন্দোলনের মধ্যে উপদেষ্টারা বিভাজনরেখা তৈরি করছেন: রিজভী

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৯:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী

ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং জুলাই-আগস্ট এই দুই আন্দোলনের মধ্যে সরকারের উপদেষ্টারা বিভাজনরেখা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই অভিযোগ করেন।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে সারাদেশে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নয়াপল্টন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে রিজভী বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের যে চূড়ান্ত আন্দোলন… এটা তো ১৫ বছর গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন, তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস নেই, চৌধুরী আলম নেই, সুমন নেই, …অদৃশ্য করা হয়েছে… কেন করা হয়েছে? কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি ঘটাতে এরা সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে ওনারা জীবন দিয়েছেন, সেই জীবনের একটা চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখলাম শিশু-তরুণ-কিশোররা জুলাই-আগস্টে জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।’

রিজভী বলেন, ‘আমি উপদেষ্টাদের বলবো, আপনারা এই ১৫-১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছেন কেন? সব রক্তস্রোত তো একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে এবং মোহনার এই মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘আপনাদের (উপদেষ্টা) বলবো, আপনারা যে কয়দিন আছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করুন। এখন তো মিনিকেট চালের কেজি ৮৫ টাকা, এদিকে আপনারা নজর দিন। একেবারে মোটা চাল সেটার দাম ৫৬/৫৭ টাকা, বিআর-২৮ সেটার দাম ৬২/৬৫ টাকা, এগুলোর দিকে নজর দিন।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি প্রধান উপদেষ্টা, মানুষের বিশ্বাস আপনার ওপর। আমরা চাই, আপনার হাত দিয়ে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে। আপনি যে কয়দিন ক্ষমতায় থাকবেন, আপনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, এ ধরনের গভীর বিশ্বাস জনগণের। কিন্তু যদি গড়িমসি হয় তাহলো তো ভিন্নমাত্রা নেবে।’

রিজভী বলেন, আপনার এক উপদেষ্টা ছাত্রদের বলছেন, ‘তোমরা যেভাবে চালাচ্ছো আমাদের, এভাবে পাঁচ বছর চললে দেশ আরও সুন্দর হবে।’ তার মানে নির্বাচনের দরকার নেই? গণতন্ত্রের আরও যে নিশ্চয়তাগুলো আছে- আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, এটা তো গণতন্ত্রের উপাদান। গণতন্ত্রের এসব উপাদান কি শেষ হয়ে যাবে? আমি সেই উপদেষ্টাকে বলতে চাই, এটার জন্যই তো লড়াই।

‘কি সবক দিচ্ছেন? তাদের তো ফ্যাসিবাদ অথবা ডিক্টেটরশিপের দিকে আপনারা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এটা তো ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘আজ জনপদের পর জনপদে যে অসন্তোষ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেটা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ফসল। এই দুঃশাসনের বিকৃত ফসলের মূলোৎপাটন করে আমাদের সমাজকে পবিত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল একটি অগ্রগণ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে- এই প্রত্যাশা আমি করছি।’

মাগুরার শিশুটিকে ধর্ষণসহ (পরে মৃত্যু হয়েছে) সব অপরাধের বিচার দাবি করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘সরকারকে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের অধিকার আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের অপরাধের বিচার হতে হবে।’

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহানা আক্তার সানু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা দলের আহ্বায়ক রুমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব রুনা লায়লা, দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহ আক্তার প্রমুখ বক্তৃতা করেন।


আমার বার্তা/এমই