এনসিপিদের সাদরে বরণ করে জবি শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ কেন: রিজভী
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ১৬:২০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা আমরা জানি না। আপনাদেরকে আমরা সমর্থন করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। তিন-চারদিন আগে দেখলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা গেলেন, তাদেরকে সাদরে বরণ করলেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা যখন তাদের আবাসনের জন্য গেলো, তখন আপনারা তাদেরকে উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে আপনারা রয়েছেন। আপনারা তো সুশীল সমাজের লোক। কিন্তু আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। মানববন্ধনের আয়োজন করেছে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, পুরো দেশ অশান্তিতে ভরে উঠেছে। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। আপনারা সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মত দেশ চালাবেন? কিন্তু ওই যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়ে পালিয়ে গেছে, তাদেরকে মদদ দেওয়ার অনেক শক্তি রয়েছে এবং যারা দিচ্ছে। সুতরাং ডানে বামে সবদিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। না হলে কেউ রক্ষা পাবেন না। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনো আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদেরকে কিন্তু জনগণ ধরে ফেলবে।
তিনি বলেন, আজ ৫ আগস্টের পর এক পরিবর্তিত পরিস্থিতি। আমরা সবাই একটু স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাসে যাবে, ক্লাস থেকে বের হবে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অরাজক পরিস্থিতি, তরুণ ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসের মধ্যে চলছে, রক্ত ঝরছে। এখন তো আর আওয়ামী দোসররা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, সকল বিরোধী দলীয় যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা সমর্থন করেছেন। তাহলে এখন কেন লাশ পড়বে? গত পরশুদিন রাত ১২ টার সময় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। সাম্য হলে একটি সম্পাদকীয় রয়েছে। কি অন্যায় করেছিল সাম্য! আমার তো মনে হয় এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে তাহলে সাম্যকে কেন হত্যা করবে। কয়েকদিন আগে সে ফেইসবুকে শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে এবং জাতীয় সংগীতের পক্ষে একটা পোস্ট করেছে। এটাই কি সেই কারণ।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়। আজকে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। অর্থাৎ দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সংগীতের পক্ষে তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদেরকে গ্রেফতার করেছেন, মানুষ এসব বিষয় সহজভাবে নেয় না। মানুষ সহজভাবে নিতো যদি, সবসময় সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু সেটা তারা নেয়নি। যেমন আবরার হত্যাকাণ্ডে নেননি, তেমনি আরও ঘটনাও নেননি। আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জানুয়ারি মাসে তফাজ্জল নামে একজনকেও হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস হবে শান্তি, এখানে থাকবে শান্তির পতাকা। সেখানে কেন রক্তপাত হবে। এটা তো হওয়ার কথা নয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, কালকে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়েছে ছাত্র দলের নেতার। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুইতোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্র দল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন কি সেটা আমরা ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছি। যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে সেটা আপনি পছন্দ করেন না। আপনার উচিত ছিল প্রথমে সেই লাশ দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। ভাইস চ্যান্সেলররা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না।
আমার বার্তা/এমই