৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ৮ দলের
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

পূর্বঘোষিত ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দল। সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও জুলাই সনদ নিয়ে জনগণের স্বপ্ন ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন এখনও নিশ্চিত হয়নি। এই অবস্থায় সমমনা আটটি দলের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের আগে জরুরি যে রাজনৈতিক নিশ্চয়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার কথা ছিল, তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
মামুনুল হক বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রণয়ন এখন জরুরি বাস্তবতা। জনগণ স্পষ্ট নির্বাচন ও নির্ভরযোগ্য ফলাফল চায়। কিন্তু আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ কার্যকর হবে না।
তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই পৃথকভাবে গণভোট আয়োজন করে জনগণের মতামত নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আরপিও সংশোধন করা হলে আটটি দল তা মেনে নেবে না। আরপিও পূর্বের মতোই রাখতে হবে, তা না হলে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আস্থাহীনতা আরও বেড়ে যাবে।
মামুনুল হক মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব, আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হলে নির্বাচনি পরিবেশ অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, সমমনা দলগুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একটি দল সেই ঐকমত্য থেকে সরে গিয়ে বিরোধিতা করছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, তারা দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত ও অবস্থান পরিষ্কার করবে। তার দাবি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া গণভোটের সময়সীমা সামনে-পেছনে সরিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং গণভোটের মাধ্যমেই জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ পাবে না, কারণ নির্বাচনি মাঠে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অন্যান্য বিষয়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। তাই নির্বাচন থেকে আলাদা সময়েই গণভোট প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৬ নভেম্বর সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানের লক্ষ্যে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১১ নভেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। মামুনুল হক বলেন, সরকার যে সাত দিনের সময় দিয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় বসে সমাধানে পৌঁছাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশের রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের একমাত্র পথ হলো জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর), মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নেজামে ইসলাম পার্টির মুফতি হারুন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এবং মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধানসহ সমমনা দলের শীর্ষ নেতারা।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আটটি দলের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত কর্মসূচি ও অবস্থান ঘোষণা করা হয়।
বক্তারা জানান, জুলাই সনদের আইনি কাঠামো স্পষ্ট না হলে জনগণ নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতায় ভুগবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে পারে না। তাই জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে তারা সমঝোতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখছেন। সমমনা আটটি দল দাবি করেছে, তারা সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান চায় এবং সেই লক্ষ্যে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
আমার বার্তা/এমই
