জামায়াতের শফিকুর-পরওয়ারদের বিপরীতে বিএনপির নতুন মুখ
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

অন্তত ৭টি আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এমন প্রার্থী ঘোষণা করেছে যারা এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় দুর্বল প্রার্থী। একইসঙ্গে এর মধ্যে কিছু আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর বাইরেও অন্তত ৭টি আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি, যেখানে অভিজ্ঞ জামায়াত নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাতটি আসনে বিএনপি এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে, যাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম বা একেবারেই নেই। বিপরীতে, এসব আসনে বেশিরভাগ জামায়াত প্রার্থী হচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা বা শীর্ষ নেতাদের পরিবারের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের নিজস্ব ভোটব্যাংকও রয়েছে।
৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে এবং জোট দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বা আলোচনার জন্য ৬৩টি আসন খালি রেখেছেন।
ঘোষিত প্রার্থী তালিকা থেকে পরদিন মাদারীপুর-১ আসনের কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গতকাল বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদেরকেই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী বলে মনে করেছি। ঘোষণা না করা বেশ কয়েকটি আসন আমাদের জোটের অংশীদারদের দেওয়া হতে পারে।'
নতুন মুখ
বিএনপি থেকে অন্তত সাতজন প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েই অভিজ্ঞ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালেও তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসনেই লড়েছিলেন। এবার এই আসনে যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম মিল্টনকে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তাহের নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং এর আগে কুমিল্লা-১২ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিএনপির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা প্রথমবারের মতো কুমিল্লা-১১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তিনি ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে এখান থেকে নির্বাচন করেছিলেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
বিএনপি সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট গঠনের পর খুলনা-৫ আসনটি জামায়াতের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।
এবার বিএনপি এই আসনে আলী আসগর লবিকে প্রার্থী করেছে। তিনি এই আসন থেকে আগে কখনও নির্বাচনে অংশ নেননি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান ঢাকা-১৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এখানে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে দিয়েছে নতুন মুখ সানজিদা ইসলাম তুলিকে। তারা দুজনই নতুন প্রার্থী।
জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী পিরোজপুর-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এই আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে সোহেল মঞ্জুরকে। দুজনই নতুন প্রার্থী।
জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরা-২। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে এখানে নির্বাচন করেন জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস আবদুল খালেক। এবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পাবেন বিএনপি থেকে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হওয়া আবদুর রউফকে।
দিনাজপুর-৬ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রথমবারের মতো প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জামায়াতের সাবেক জেলা আমির আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে। আনোয়ারুল আগেও এখান থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
বিএনপির ঘোষণা না করা আসনগুলো
এমন অন্তত সাতটি আসন রয়েছে যেখানে জামায়াত প্রার্থী নির্ধারণ করলেও বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। বিএনপি এসব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে কিংবা জোটের অংশীদারদের জন্য রেখেছে।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবারই জামায়াতের প্রার্থী থাকা আবদুল হাকিম এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি এখনো এই আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই মির্জা ফয়সাল আমিন এবং সাবেক ড্যাব মহাসচিব আবদুস সালাম এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ নবম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কক্সবাজার-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবারও তিনিই এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে, ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২ আসনে, জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী পিরোজপুর-১ আসনে, আইনজীবী ও সাবেক ছাত্রশিবির নেতা শিশির মনির সুনামগঞ্জ-২ আসনে এবং জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
এসব আসনে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার
