দেশে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ দৃশ্যমান নয়
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বৈঠক
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:১০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন ও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, প্রেস এবং তথ্য বিভাগের প্রধান মিসেস বাইবা জারিনা ( Ms Baiba Zarina, Deputy Head of Delegation, Head of Political, Economic, Trade, Press and Information Section )–এর সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধি দল। দলের চেয়ারম্যান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশান-২ এ ইউরোপীয় ইউনিয়ন কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় বেলা ১২টা ২০ মিনিটে।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন—দলটির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসরুর মাওলা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) মিস্টার সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদলকে জানান—সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বললেও বাস্তবে দেশে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দৃশ্যমান নয়। প্রশাসন বিশেষ দুইটি বড় রাজনৈতিক দলে বিভক্ত। গত ৫ আগস্টের ঘটনাবলীর পর জাতীয় পার্টির অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে, যা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। অনেক নেতার বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নির্বাচনের আগে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা না তুললে জাতীয় পার্টি কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মতামত জানতে চান। এ বিষয়ে মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন—মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় আমরা স্বাগত জানাই। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নয়; এটি কার্যকর হবে চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ফলে বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কিনা—এ নিয়ে আমাদের গভীর সন্দেহ রয়েছে।
হাওলাদার আরও বলেন—মিথ্যা মামলায় আমাদের সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টুপুসহ অসংখ্য নেতাকে বন্দি করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগের কথা বলা হলেও নির্বাচন মাত্র আড়াই মাস বাকি—এখনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এখনো প্রচারণায় নামতে পারছি না; অথচ সরকারসমর্থিত দলগুলো নির্বিঘ্নে প্রচার চালাচ্ছে। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বৈঠক শেষে বৈঠকের সার্বিক বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসরুর মাওলা গণমাধ্যমকে জানান—ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধিদলের প্রধান জানতে চান জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা। উত্তরে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন—জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল; সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু বর্তমানে দেশে নির্বাচনোপযোগী পরিবেশ নেই। দেশে ‘মব কালচার’ চলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই–আগস্টে দায়ের করা মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। বিদেশ যাত্রায় অযথা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তাদের বিরুদ্ধেও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—যা একজন নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যে সংলাপ করেছে, সেখানেও আমাদের আমন্ত্রণ জানায়নি। ফলে সরকার বা নির্বাচন কমিশন আদৌ চায় কিনা জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিক—সে বিষয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে।
আমার বার্তা/এমই
