অনেকের শাসন দেখেছেন, এবার ইসলামপন্থীদের সুযোগ দিন: চরমোনাই পীর

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম / ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কালে নানা সরকারকে সুযোগ দেওয়ার পর এবার জনগণকে ইসলামপন্থীদের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বরিশালে ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

এ সময় চরমোনাই পীর বলেন, যারা ক্ষমতালিপ্সু, যারা বিভিন্ন সময়ে মুখরোচক কথার মাধ্যমে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে, পাচার করেছে, চোরের দিক থেকে বারবার প্রথম হয়েছে—তাদেরকে সমাবেশ থেকে বার্তা দিতে চাই, তাদের জায়গা বাংলার মাটিতে হবে না; তাদেরকে উৎখাত করতে হবে। যারা বাংলাদেশের পরিবেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে, তাদের জায়গা বাংলাদেশে হবে না। আমরা এ দেশকে মুক্ত করার জন্য রাজপথে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছি। কিন্তু চাঁদাবাজি দেখার জন্য রাস্তায় নামিনি, মানুষ খুন হবে—এটা দেখার জন্য রাস্তায় নামিনি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। আর যারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদেরকে এ দেশে আর সুযোগ দেওয়া হবে না। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্টেশন দখলের সঙ্গে যারা জড়িত—তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আপনাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এখনো সময় আছে, আপনারা পরিবর্তন হোন। হাসিনাও বলেছিল যে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’। কিন্তু তিনি রান্না করা খাবার খেয়ে যেতে পারেননি। সুতরাং দেশের সবার শিক্ষা নিতে হবে। নইলে এমন পরিণতির জন্য আপনাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আপনারা অনেক শাসন দেখেছেন, এবার ইসলামকে সুযোগ দিন। আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র উপহার দেব—ইনশাআল্লাহ। ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি থাকবে না, অবিচার থাকবে না, খুনাখুনি থাকবে না, দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে না। অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া এবং জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের সুস্থতা কামনা করেন পীর সাহেব চরমোনাই।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর বলেন, আমরা অনেকেই আগে পীর পছন্দ করতাম না। আমিও ছাত্রজীবনে এমনটা মনে করতাম। কিন্তু আজকে চরমোনাই পীর সাহেবের পাশে বসে মনে হলো, তিনি শুধু পীর নন—তিনি এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার একজন মহাবীর। তিনি বলেন, আমরা আট দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে দুটি দলের কথা বলেছেন—একটি হলো হিজবুল্লাহ, আরেকটি হিজবুশ্ শয়তান। সুতরাং আমরা আল্লাহর দলে থাকতে চাই। আসুন, আমরা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কুরআনের আইন চালু করি। আমরা মানবসৃষ্ট আইনের সংবিধান দেখতে চাই না; মদিনার ইসলাম কায়েম করতে চাই। সংস্কারের মাধ্যমে আমরা সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে চাই।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। সবশেষে তিনি ৮ দলকে আগামী দিনে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবেনা’—এটা হবে না ইনশাআল্লাহ। ইসলামী হুকুমত হলে এ দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ধর্মীয় আচার পালন করবে। তিনি বলেন, ইসলামী হুকুমত হলে দেশের সবাই একসাথে হাসবে এবং কাঁদবে; যদি খেয়ে থাকি তবে একসাথে খাবো, আর না খেয়ে থাকলে সবাই একসাথে না খেয়ে থাকবো। তিনি বলেন, আজকের এ সমাবেশ দেখে কেবল জালিম ও চাঁদাবাজরাই নাখোশ হতে পারে; মুক্তিকামী মানুষ আশার আলো দেখবে—ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, সহকারী মহাসচিব মুফতি সৈয়দ ইসহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসির আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একে এম আনোয়ারুল ইসলাম চান এবং জেনারেল সেক্রেটারি নিজামুল হক নাঈম।


আমার বার্তা/এমই