কারাবাসের রাজনীতি: খালেদা জিয়ার জীবনের কঠিন অধ্যায়
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসার পর থেকে অন্তত পাঁচবার আটক হয়ে কারাজীবন ভোগ করতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। এর মধ্যে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনবার, ২০০৭ সালে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের শাসনামলে একবার এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে একবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রথমবার কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় খালেদা জিয়াকে।
২০০৭ সালে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় এক বছরের বেশি সময় তাকে কারাভোগ করতে হয়।
২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে তার তৎকালীন ক্যান্টনমেন্টের মইনুল হক রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাসা থেকে তাকে সরাসরি সিএমএম আদালতে নিয়ে গিয়ে খালেদার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে আটক করে রাখা হয়। সাব জেলে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জিয়াকে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রথমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কারাগারে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে স্বাস্থ্যগত কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে রাখা হয়।
দীর্ঘ ২ বছরেরও বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয় আইনি শর্তে, এটি পূর্ণাঙ্গ মুক্তি নয়।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত তাকে রাজনৈতিকভাবে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে জুলাই বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেন। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পান।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে তার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। তবে তার শারীরিক অবস্থার ফের অবনতি হলে গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে হতে পারে বলে জানা গেছে।
