স্ত্রীকে মাছ ব্যবসায়ী বানিয়ে ঘুষের টাকা বৈধ করার চেষ্টা

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ১১:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  শাহীন আলম

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মজিবুর রহমান সিকদার অবৈধ টাকা বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪ হাজার টাকা মূল্যের ২০৩ দশমিক ৫ শতাংশ জমি চা বিক্রেতা, পান বিক্রেতা, কাঠমিস্ত্রি ও প্রবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে দান হিসেবে পেয়েছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানান তিনি। এতে শেষ রক্ষা হয়নি। তার বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার ২৭৫ টাকা অবৈধ আয়ের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় ক্রয়ের প্রমাণ পাওয়ায় তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সংস্থাটির উপপরিচালক জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রকৌশলী মজিবুর রহমান সিকদারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার স্ত্রী কামরুন নাহারের সম্পদ বিবরণী জমা নেয় দুদক। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৫ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ২৬ টাকার সম্পদ থাকার ঘোষণা দেন। দুদকের অনুসন্ধানে তার ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার ৮১৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার ২৭৫ টাকা আয়ের বৈধ করে উৎস পাওয়া যায়নি। এ পরিমাণ সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, আসামি কামরুন নাহার ২০০১-২ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে তার আয় হয়েছে ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। তবে তিনি আয়ের স্বপক্ষে ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসার ধরন, রশিদ বই ও কোনো ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি। এছাড়া তিনি উপহার হিসেবে পাওয়া সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে ৮০ লাখ ৪ হাজার ৭৫১ টাকা পেয়েছেন তার পক্ষেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তার ব্যবসা থেকে ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার আয় ও উপহার হিসেবে ৮০ লাখ ৪ হাজার ৭৫১ টাকা পাওয়ার ঘটনা সঠিক নয়। এসব টাকা অবৈধভাবে অর্জন করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, কামরুন নাহারের ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার ৮১৪ টাকার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাকালে দেখা গেছে, তিনি মাছ ব্যবসা থেকে ৩ কোটি ৮২ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকা আয় দেখান। মাছ ব্যবসায়ীর প্রমাণ স্বরূপ তিনি ২০০২ সালের ২৫ ডিসেম্বরের ৭ একর জমির ২০ বছরের চুক্তিনামা, ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবরের ৪ দশমিক ১১ একর জমির ১৬ বছর মেয়াদি চুক্তি এবং ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৭ দশমিক ১৫ একর জমির ১০ মেয়াদি চুক্তিনামা উপস্থাপন করেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি যেসব চুক্তিনামায় যেসব স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে তা সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ও ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল সরবরাহ করা হয়েছে। তার মাছ চাষের জন্য লিজ নেয়া জমির চুক্তি জাল।

জানা গেছে, গত ১৪ মে কামরুন নাহারের স্বামী এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মজিবুর রহমান সিকদারের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মুজিবুর রহমান তার অবৈধ আয়কে বৈধ করে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪ হাজার টাকা মূল্যের ২০৩ দশমিক ৫ শতাংশ জমি চা বিক্রেতা, পান বিক্রেতা, কাঠমিস্ত্রি ও প্রবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে দান হিসেবে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।