আন্দোলনের ইস্যুতে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চায় বিএনপি

৩ দিনের কর্মসূচি শুরু আজ

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ১৩:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

  রতন বালো

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে বিএনপিকে মুক্ত করার জন্যই তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালে রাখা হচ্ছে বলে কেউ কেউ দাবি করেন। তারা বলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার শরীরে যে পেসমেকার বসানো হয়েছে, সেটি একটি গতানুগতিক কার্যক্রম। এটির সাথে গুরুতর স্বাস্থ্য অবনতির কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া একদিকে বসানো হচ্ছে পেসমেকার, অন্যদিকে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টের কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা? এ নিয়ে বিএনপি এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। মূল কথা হলো, বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে বন্দি করে রাখতে চায় বিএনপি।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার থেকে ৩ দিনের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বিকেল তিনটায় নয়াপল্টনের অফিসের সামনে সমাবেশ করবে। আগামী ১ জুলাই সোমবার সারাদেশে মহানগরগুলোতে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ৩ জুলাই সারাদেশের জেলা সদরে তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হবে।

গত বুধবার দুপুরে দলের অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে আরো বেগবান করা হবে। আমরা এই মুক্তির আন্দোলনকে একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের আজকের যৌথ সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।

অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। বেগম জিয়া এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বাস্থ্য অবনতি হওয়ার কারণে ৩ দিন আগে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শরীরে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়েছে।

অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর থেকে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আইনি পথ অনুসরণ করেছে। কিন্তু কোথাও তারা সুফল পায়নি। এমনকি হাইকোর্টেও বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

তবে এখন যেহেতু বেগম জিয়া অসুস্থ, এ কারণে বিএনপির উচিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়া। কিন্তু বিএনপি সেই পথে যাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপি ডুয়েল গেম খেলছে। একদিকে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে বন্দি করে রেখেছে, যেন তিনি রাজনৈতিক তৎপরতায় নিজেকে যুক্ত করতে না পারেন। তারেক জিয়ার একক কর্তৃত্বে যেন বিএনপি চলে।

মূলত খালেদা জিয়ার হাত থেকে বিএনপিকে মুক্ত করার জন্যই তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালে রাখা হচ্ছে বলে কেউ কেউ দাবি করেন। তারা বলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার শরীরে যে পেসমেকার বসানো হয়েছে, সেটি একটি গতানুগতিক কার্যক্রম। এটির সাথে গুরুতর স্বাস্থ্য অবনতির কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া একদিকে বসানো হচ্ছে পেসমেকার, অন্যদিকে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টের কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা? এ নিয়ে বিএনপি এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। মূল কথা হলো, বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে বন্দি করে রাখতে চায় বিএনপি।

আবার অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের গতি বাড়াতে চায়। তারা মনে করছেন যে, এই বিষয়টি এখন স্পর্শকাতর ইস্যু। এটি নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণ সম্পৃক্ত হবে। সবকিছু মিলিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপি এখন একটা রাজনৈতিক খেলায় নেমেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আর শেষ পর্যন্ত যদি বেগম খালেদা জিয়ার কোনো খারাপ পরিণতি হয় তাতেও যেমন বিএনপির লাভ, আবার বেগম জিয়াকে যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয় তাহলেও তারেক জিয়া কণ্টকমুক্ত হবেন। আর এ কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থ রেখে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন বিএনপির একটি নতুন কৌশল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কিন্তু এই সমাবেশ করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি কতটুকু সুরাহা হবে তা নিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যেই সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে। সরকারকে বেগম জিয়া ইস্যুতে চাপে ফেলার জন্য বিএনপি নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটি বলেননি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া ফিরোজায় থাকতে পারছেন। না হলে তার এতদিন কারাগারে থাকার কথা ছিল।

এ বিষয়ে এই আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করা হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের এই দাবি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করছি। আমরা জনগণের কাছে প্রত্যাশা করব, জনগণ তাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার প্রাণ রক্ষা করা, তাকে মুক্ত বাতাসে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং তারা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

আমরা আশা করি, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে আপামর জনসাধারণ একাত্ম হবেন। আমাদের বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন তারা অনেকে বিবৃতি দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার মুক্তির কথা বলেছেন।


আমার বার্তা/জেএইচ