গ্রামবাসী কাজ ফেলে মাটি খুঁড়ছে তো খুঁড়ছেই

ঠাকুরগাঁওয়ে ইটভাটায় সোনার খনির গুজব

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ১১:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আসাদুজ্জামান তপন

গ্রামীণ পাকা সড়কের পাশে থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট। পাশেই ধোঁয়া ছড়িয়ে চুল্লিতে পুড়ছে সেগুলো। চুল্লি ঘিরে মাটির ঢিবি। সেই ঢিবির মাটি খুঁড়লেই মিলছে সোনা এমন খবরে কোদাল, খুনতি, শাবল, বসিলা নিয়ে দিন-রাত সোনা খুঁজে চলছেন গ্রামবাসী। গত এক সপ্তাহ ধরে এমন হুলুস্থ’ূল কাণ্ড চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাজোর এলাকার ‘আরবি ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটায়।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ইটের কাঁচামাল হিসেবে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় স্তূপ করে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেই মাটি কাটতে গিয়ে শ্রমিকরা সোনা পেয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে কোদাল, খুনতি, শাবল, বসিলা নিয়ে সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন গ্রামবাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর পেয়ে আশপাশের এলাকা এমনকি দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন এসে সেখানে ভিড় করছেন। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ওই ভাটার মাটির ঢিবি খুঁড়তে এসে কেউ কেউ সোনা পাচ্ছেন। তবে কে কে সোনা পেয়েছেন, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাটির ঢিবিতে অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশু মাটি খোঁড়ার যন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ে চলেছেন। কোনো দানাদার বস্তু পেলেই, তা যাচাই করে দেখছেন। ইটভাটার সামনে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান। জ্যৈষ্ঠের গরমে ঘামঝরা দেহে স্বস্তি এনে দিতে অনেকেই সেখানে ছুটছেন। চা-বিস্কুট মুখে নিয়ে আবার ফিরে আসছেন মাটির ঢিবিতে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সেখানে চলছিল নানা গালগল্প। রাজোর গ্রামের বাসিন্দা শচীন রায় বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে এইঠে মেলা লাগি গেইছে। সোনার খোঁজে কুনঠে কুনঠে থাকিয়া লোক আসছে, কহিবা পারো না।’

স্থানীয় লোকজনের দাবি, ওই ভাটার মাটির ঢিবি খুঁড়তে এসে কেউ কেউ সোনা পাচ্ছেন। তবে কে কে সোনা পেয়েছেন, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।

চায়ের দোকানি লালন বর্মণ বলেন, ‘অ্যালাতো লোক কম। রাইতত আসেন, দেখিবেন কত লোক।’ এরপর মুচকি হেসে বললেন, ‘লোকলা সোনা পাছে কি না কহিবা পারু না। তবে মোর কেনাবেচা ভালোই হচ্চে।’ নাজমুল হোসেন নামের স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বলেন, সন্ধ্যা গড়ালেই মানুষজন হাতে টর্চলাইট, চার্জার লাইট, হারিকেন নিয়ে চলে আসেন ইটভাটায়। রাতের আঁধারে ভাটার মাটির ঢিবি জোনাকি পোকার মতো জ্বলজ্বল করে। সোনা খোঁজার এ কর্মযজ্ঞ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ভাটাটির পাশের গ্রামে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ এলাকার তৌহিদুল ইসলামের মেয়ের বাড়ি। ঘটনাটি শুনে তিনি এখানে ছুটে এসেছেন। সেখানে গিয়ে নিজেও মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। ঘণ্টা দু-এক চেষ্টার পর নিরাশ হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সোনার জন্য গ্রামের সবাই মাটি খুঁড়ছে তো খুঁড়ছেই। শুনছি, কেউ কেউ সোনার ঢিকা পাচ্ছে। আমিও চেষ্টা করে দেখলাম। কই কিছুই পেলাম না।’

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজোর গ্রামের গৃহিণী জয়ন্তি রানী বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন।


আমার বার্তা/জেএইচ