রাজউকের নির্মাণ বিধিমালা না মেনে নির্মিত হচ্ছে ইমারত

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ১৯:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

  কুমার সনি:

ঢাকায় ইমারত নির্মাণে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তৈরি হচ্ছে ইমারত। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর নির্মাণ আইন কাগজে কলমে থাকলে ও প্রয়োগ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাযশে আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে গড়ে তুলছে একের পর এক বহুতল ভবন এবং ঢাকাকে ফেলছেন ঝুঁকির মুখে।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়,রাজউক জোন-৫ এর জিগাতলা,শংকর,ধানমন্ডি ১১-১৫,ধানমন্ডি নতুন ৮/এ এবং জোন ৮ এর নারায়ণগঞ্জ,মাতুয়াইল,হাবিবনগর,কদমতলী এলাকার অধিকাংশ ভবনে রাজউক অনুমোদিত ভবন নির্মাণ তথ্যাদির বোর্ড নেই। কিছু কিছু ভবনে ভবন নির্মাণ তথ্যাদির বোর্ড থাকলেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়া নেই এবং যেটুকু জায়গায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তা থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি করে নির্মাণ কাজ চলমান। অনেক ভবনেই নেই সুরক্ষা বা নিরাপত্তা বেষ্টনী। আরো জানা যায় কিছু কিছু ভবন নির্মিত হচ্ছে রাজ উকের অনুমোদন ছাড়াই।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে আরো দেখা যায়,জোন-৫ এর ধানমন্ডি পুরাতন ১৫ নতুন ৮/এ এর ৩১৪/১ হোল্ডিং এ একটি ভবন নির্মিত হচ্ছে প্রায় ৬ কাঠা জায়গার উপর। ভবনটিতে প্রবেশ পথের প্রস্থ ৪.৫ ফুট এবং ভবনের কোথাও রাজউকের তথ্য বোর্ড নেই। যথার্থ সেট ব্যাক না রেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্মাণ করছে ভবনটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। ভবনটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এস ফার্ম।এবং জোন -৮ এর হাবিবনগর এলাকায় প্রবেশের মুখে ১ম ভবন,ভবনটি ৮ তলা নির্মিত হয়েছে ৩.৬ কাঠা জায়গার উপর।ভবনের মালিক হারুনুর রশিদ গং।ভবনটি যথার্থ সেট ব্যাক না রেখে নিজেদের ইচ্ছে মত এবং বিদ্যুতের খুঁটি ও বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার এর সাথে লাগিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এরই একটি প্লট পরেই নির্মাণ করা হয়েছে আবাবিল টাওয়ার নামে আরেকটি ৯ তলা ভবন ৫ কাঠা জায়গার উপর। একই কায়দায় এই ভবনটিও যথার্থ সেট ব্যাক না রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে নিজেদের মনগড়া নকশায়। ভবনটিতে কোন প্রকার নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। ধানমন্ডি ৮/এ এর ৩১৪/১ হোল্ডিং এর নির্মাণাধীন ভবনটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এস ফার্ম কোম্পানির ম্যানেজার মারুফের নিকট মুঠোফোনে ভবনটির রাজউক অনুমোদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার সদুত্তর দিতে পারেননি।

হাবিবনগর এলাকার উক্ত ভবন দুইটির মালিকদের নিকট মুঠোফোনে ভবনগুলোর অনুমোদন বহির্ভূত নির্মাণ এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং বিদ্যুতের খুঁটি ও ট্রান্সফরমার এর সংস্পর্শে  ভবন নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন " আপনার যা কিছু জানার রাজউকের ইমারত পরিদর্শক এর কাছ থেকে জেনে নেন উনি সব জানে,আমরা কিছু বলতে পারবো না"।

ধানমন্ডি এলাকার উক্ত ভবনটির ইমারত পরিদর্শক সাদ্দাম হোসেনের নিকট ভবনটির অনুমোদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন "ভবনটিতে নোটিশ করা হয়েছে কিন্তু তারা কোন প্রকার জবাব দেন নি, পরবর্তী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন”। এবং হাবিব নগর এলাকার ইমারত পরিদর্শক তারিফুর রহমানের নিকট ভবনগুলো অনুমোদন বহির্ভূত নির্মাণ এবং বিদ্যুতের  খুঁটির সাথে লাগিয়ে নির্মাণের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন "ভবনগুলোতে আমি নিজ হাতে প্রথম নোটিশ প্রদান করে আসছি এবং প্রথম নোটিশের জবাব না দেওয়ায় দ্বিতীয় নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন নোটিশের জবাব দেয়নি এবং পরবর্তী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন”।

এমতাবস্থায় ভবন মালিক নির্দ্বিধায় অবৈধভাবে রাজউক নকশার বহির্ভূত বর্ধিত অংশ সহ ভবনটি নির্মাণ করে যাচ্ছেন,যার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় ঘটাতে পারে মর্মান্তিক  দুর্ঘটনা। রাজউকের এই এলাকা গুলো সহ আরো অন্যান্য এলাকার অনিয়ম ও অবৈধ নির্মাণাধীন ভবন সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান অব্যাহত আছে পরবর্তীতে যা ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করা হবে। 

 

আমার বার্তা/এমই