সরকারী চাকরি করেও মদের বারের মালিকানা বিমানের ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ২৩:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার:
- নীতি নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে প্রশ্ন, নানা অনিয়ম করে বার বার আলোচনায়
- ব্লুমুন নামের এ বারের সংশ্লিষ্টতা কথা একাধিক কর্মকর্তার স্বীকার
মদের বারের মালিকানা ফাঁস হওয়ায় এবার আলোচনায় এসেছেন বিমানের আলোচিত ক্যাপ্টেন ফারিয়াল বিলকিস আহমেদ। বনানীর ১১ নম্বর একটি ভবনে ব্লুমুন বারের মালিকানায় রয়েছেন ক্যাপ্টেন ফারিয়াল। বিষয়টি ফাঁস হলে বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগেও নানা কারণে আলোচনায় আসা ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের এবারে মদের বারের মালিকানা ফাঁস নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিমানের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ফ্লাইট পরিচালনার দ্বায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেনের এমন ব্যবসায় জড়ানো নিয়ে তার নীতি নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারী চাকরিজীবি হয়েও বার পরিচালনার মত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে অনেকেই পুরো প্রতিষ্ঠানের ইমেজ ক্ষুন্নের সঙ্গে তুলনা করছেন।
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি বিষয়টি জানিনা। না জেনে মন্তব্য করা যাবেনা।
তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিমানের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এটা চরমভাবে নীতিকতা বিরোধী। বিমানের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সরকারী চাকরি করে কখনও এ ধরনের ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যাবেনা মর্মে নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ফারিয়ালের বিরুদ্ধে বার বার নানা ধরনের অভিযোগে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বিমানের ইমেজ ক্ষুন্ন করে। এবারে তার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ এটা একাবারে নীতি বিবর্জিত।
তবে অভিযোগের ব্যাপারে ক্যাপ্টেন ফারিয়াল বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ভিত্তিহীন। আমি কোনভাবেই ওই বার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত না। আমি একজন নারী। আমি কি করে এমন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারি।
তবে তিনি বলেন, ওইবার যারা পরিচালনা করেন তাদের আমি চিনি। তারা আমাদেরই বন্ধু বান্ধব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিজাত এলাকা বনানীর ১১ নম্বর রোডের মাথায় ব্লুমুন রিক্রেয়েশন ক্লাব। ১০ তলা ভবনের লিফটের (৫) অর্থাৎ ৬ তলায় একটি ফ্লোরে এর অবস্থান। ক্লাবের আড়ালেই এখানে রয়েছে বার। এছাড়াও রিক্রেয়েশনের অন্যান্য সামগ্রিও রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে ডিজে পার্টির চলে নগ্ন নৃত্য। আর প্রতিরাতেই লাইভ সং নামের পার্টি হয়। যদিও এই পার্টিতেও গানের পাশাপাশি নাচেরও আয়োজন থাকে।
জানা যায়, এই ক্লাবেরই বারের মালিকানাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন ফারিয়াল। মাঝে মধ্যে তিনি সেখানে যান।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সেখানকার একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের সংশ্লিষ্ঠতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাপ্টেন ফারিয়াল প্রশিক্ষণে ইচ্ছে করে ফেল করানো হয়েছে বলে এক প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আলোচনায় প্রথম আসেন। তাছাড়া এক ফ্লাইটের দরজা ভেঙ্গে ফেলার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ উঠে, বিমানের ক্যাপ্টেন ফারিয়াল বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ বিমানে কর্মরত। কিন্তু তিনি ঘটনা ঘটান বোয়িং ৭৭৭ এর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকার সময়ে। ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এর বৈধ মেয়াদ ছিলো ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর তিনি পরবর্তী মেডিক্যাল করেন ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর। ফলে তিনি ৩৮ দিন বৈধ মেডিক্যাল ছাড়া ছিলেন এবং যার মধ্যে সিমুলেটর ট্রেনিং করাসহ ৪টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া ফারিয়াল ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকা থেকে উহান এবং উহান থেকে ঢাকা ৪১৯জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাই করেছেন। একই সাথে ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর আবার তিনি ঢাকা থেকে গুয়াংজু এবং গুয়াংজু থেকে ঢাকা ৪ শতাধিকের বেশি যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এছাড়া বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট না থাকলেও ২০২১ সালের ২ অক্টোবর তিনি সিমুলেটর ট্রেনিং করেছেন। কিন্তু কিভাবে আর কার ক্ষমতায় তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা এবং সিমুলেটর ট্রেনিং করলেন সেটা দেখে রীতিমত বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ হতভম্ব হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যে সময়ে তথা ৩৮ দিনের মধ্যে ফারিয়াল মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া তিনি যে ৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন এই সময়ে যদি বাংলাদেশ বিমানের বিমানটি কোন ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হতো, তাহলে বাংলাদেশ বিমানের বিমানটির কোন ধরনের ইন্সুরেন্স কভারেজ থাকতো না। সাধারণত প্রতিটি বিমানের জন্য প্রত্যেকটি বিমান কোম্পানি ইন্সুরেন্স সুবিধা নিয়ে থাকে। কারণ যদি কোন বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয় তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে আর্থিক সুবিধা পায় বিমান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। একই সাথে যাত্রীরা জীবন বীমা সুবিধা পেয়ে থাকে।
আরও জানা যায়, কোন বৈমানিকের ভুলের কারণে অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট অথবা বৈমানিক যদি ভুলভাবে বিমান পরিচালিত করে তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে বিমান কোন আর্থিক সুবিধা পাবে না। বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া কোন ফ্লাইং পরিচালিত করলে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী নিয়ম লঙ্ঘন বলে বিবেচিত।
এদিকে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোন বৈমানিক মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া বিমান পরিচালনা করেন তাহলে প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য বৈমানিককে ৯০ দিন করে সাসপেন্ডসহ(গ্রাইন্ডেড) বিমান পরিচালনা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দন্ডের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন ফারিয়াল অবৈধভাবে যে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। সেখানে এই বৈমানিকের বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী, ৩৬০ দিন গ্রাউন্ডেড থাকবে। একই সাথে বিমান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান তথা বাংলাদেশ বিমানকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড হিসাব করলেও সেখানে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে সংস্থাটিকে।
এছাড়াও বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭ এর দরজা ভাঙ্গেন ক্যাপ্টেন ফারিয়াল। তখন তিনি এই বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান এই বৈমানিক ফারিয়ালকে শাস্তি না দিয়ে উপহার হিসেবে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। যা নিয়েও বাংলাদেশ বিমানের বৈমানিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ রয়েছে।
উল্লেখ বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে ক্যপ্টেন ফারিয়ার পেটে দীর্ঘদিন টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চিকিৎসক তাকে অপারেশন করার পরামর্শ দিলেও কিন্ত তা করছেন না। অপারেশন না করেই বিমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে যাচ্ছেন। সুএে জানা যায়, কোন কর্মকর্তা এমন অসুস্থতা নিয়ে ডিউটি করার এখতিয়ার নেই। এ প্রসঙ্গেও ফারিয়া ভিওিহীন গুজব বলে এড়িয়ে যান।