বিমানবন্দরে স্বর্ণ পাচারকারী রুবেল শতকোটি টাকার মালিক

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিবেদক:

# ধর্ষণ, মানি লন্ডারিং ও মানব পাচারসহ রয়েছে একাধিক মামলা  
# তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে গোয়েন্দারা, যেকোন সময় গ্রেপ্তার
# দুদক অফিসে তার বিরুদ্ধে জমা পড়েছে দুর্নীতির ফাইল

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালানী করে রুবেল এখন শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও থেমে নেই তার চোরাচালান। প্রতি মাসেই তার কাছে আসছে স্বর্ণের বড় বড় চালান। এসব ঘটনায় মাঝে মধ্যে স্বর্ণ বহনকারীরা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতা রুবেল রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া রুবেল বিমানবন্দরে মানি লন্ডারিং করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, মানব পাচার ও ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এইসব বিষয়ে রুবেলের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা ও দুদক কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছে। যে কোন সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন রুবেল এমন এমন কথা জানিয়েছেন পুলিশ।

জানা গেছে, গত নয় বছর আগে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থেকে রুবেল জীবিকার তাগিদে ছুটে আসেন ঢাকায়। তারপর কোন এক কাস্টমস এজেন্ট কোম্পানিতে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনের পিয়নের চাকরি শুরু করেন। সেখানে বছর ছয়েক চাকরি করেন তিনি। ধাপে ধাপে বেতন বাড়লেও মালিক হয়ে টাকা কামানোর নেশা পেয়ে বসেছিল রুবেলের। অদৃশ্য যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় এক সময়ে বদলে যায় রুবেলের জীবন। সেই থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বছর গুলোতে আওয়ামী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এই রুবেল। নিজেকে পরিচয় দিতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আত্মীয় হিসাবে। আওয়ামী রাজনীতির প্রভাব বিস্তার করে গত কয়েক বছরে বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ৭/৮ বছর আগে তাদের কোন আয় রোজগার ছিলনা। একাধিক এজেন্ট কর্মচারীর প্রশ্ন পাঁচ হাজার টাকা বেতনের পিয়নের চাকরি করে মাত্র কয়েক বছরে হয়ে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। তথ্য সূত্রে জানা যায়, রুবেলের জামালপুরের সরিষাবাড়ি জামিরা এলাকায় রয়েছে ১০০ বিঘা কৃষি জমি। সরিষাবাড়ি শহরের দিগপাইত ছোনটিয়া মোড় এলাকায় রয়েছে কয়েকটি প্লট। উত্তরা এলাকায় রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য ফ্ল্যাট। রয়েছে কোটি কোটি টাকার কয়েকটি বিলাশ বহুল গাড়ি। দুদকের অভিযোগে বলা হয়, এয়ারপোর্টে নানা ধরনের অপকর্ম, মানি লন্ডারিং অপরাধের সাথে যুক্ত আছেন এই রুবেল। গত ৭ নভেম্বর ’২০২২ এ ঢাকা বিমান বন্দর থানায় রুবেলের নামে মানি লন্ডারিং মামলা হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর ’২০২২ এ তেজগাঁও থানায় রুবেলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের মামলা ও নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা মডেল থানায় রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাও হয়। সর্বশেষ ২৩ আগস্ট ’২০২৪ এ উত্তরা পূর্ব থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। তাকে ১৮৪ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবি’র এক কর্মকর্তা জানান, হজরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার সদস্য সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিভিল এভিয়েশনের অসাধু চক্র। এছাড়া কাস্টমসসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, সিভিল এভিয়েশনে দৈনিকভিত্তিক মাস্টার রোলে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি করেন এমন কর্মচারীদের রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি ও দামি গাড়ি। সিভিল এভিয়েশনের ড্রাইভার, ট্রলিম্যান, ক্লিনার, বিমানের লোডার, ড্রাইভার এমন কি লাগেজপত্র আনানেয়া করে এমন কর্মচারীরাও কোটিপতি। শুধু যে এসব কর্মচারীই অসাধু তা কিন্তু নয়, তাদের কিছু বসও আছেন যারা প্রচুর অবৈধ অর্থ-বিত্ত ও সম্পদের মালিক। এ অসাধু চক্রের অবৈধ অর্থের উৎস হলো স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাচালানে সহযোগিতা করা।


আমার বার্তা/এমই