গবেষণার মাধ্যমে ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করবো: ড. আনোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০৭ | অনলাইন সংস্করণ
অনক আলী হোসেন শাহিদী:

বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট (ব্রি) এর “নতুন ০৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণার উন্নয়ন” - প্রকল্পের নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক ডঃ মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন-"উন্নত গবেষণার মাধ্যমে স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে কাজ করবো, কারন এই প্রকল্পটির উন্নয়ন ভাবনা ও সম্ভাবনা কে সামনে রেখে প্রকল্পটি প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে আমি কাজ করেছি। প্রকল্পটির, প্রনয়ন থেকে অনুমোদন পর্যন্ত সবগুলো ধাপই সফল ভাবে শেষ করতে যা যা করণীয় সব করেছি এ কারনে প্রকল্পটির সফলতা নিয়ে আমি দূঢ় ভাবে আশাবাদি”- সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়ে এই প্রতিনিধির নিকট তার নিজস্ব ভাবনা ব্যক্ত করতে গিয়ে এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য যে, কৃষি মন্ত্রনালয়-এর পরিকল্পনা-৩ শাখা তার দপ্তরের স্মারক নং-১২.০০.০০০০.০৮৪.১৪.১৬০-১৬-১৪৮ তারিখ ০৬ অক্টোবর ২০২৫ এর এক অফিস আদেশ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোস্ট-হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেনকে “- নতুন ০৬ টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণার উন্নয়ন”-শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এই একই স্মারকে ২০২৩ সালের ২রা জুলাই ইং তারিখে স্মারক নং ১২.০০.০০০০.০৬৩.১৪.০০৩.১৯.২১৮ নং স্মারকে নিয়োগকৃত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোঃ মোফাজ্জল হোসেনকে - প্রকল্প পরিচালকের পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এক অনুসন্ধানে জানা যায়- ২০২৩ সালের ৬ জুন একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩৬৯ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে শুরু হয়। ২০২৮ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা বয়েছে । গত ২টি অর্থবছর ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবে প্রকল্পের উন্নয়ন হয়েছে শতকরা ৯ ভাগের কম। কিন্তু কেন এই উন্নয়ন প্রকল্পটির কাজের ধীর গতি? এর উত্তর খুঁজতে গতে গিয়ে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক ডঃ মোঃ মোফাজ্জেল হোসেনের- প্রকল্পের কাজ স¤র্পকে অদক্ষতার ও অভিজ্ঞতার অভাব। এছাড়া মোঃ মোফাজ্জেল হোসেনের প্রকল্প স¤র্পকে সংশ্লিষ্ট কৃষি মন্ত্রনালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ও প্রশাসনিক অযোগ্যতার কারনে ২০২৩ সালের ৬ই জুন একনেক এ অনুমোদিত হওয়া প্রকল্পে - ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের এডিপিতে কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী পর্যায়ে আর এ ডি পিতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেও-আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগ, নতুন আঞ্চলিক কার্যালয় ও স্যাটেলাইট অফিস ভাড়া, আসবাবপত্র সংগ্রহ এবং গবেষণা যন্ত্রপাতি ক্রয় বিলন্বিত হওয়ায় সময়মত মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ডঃ মোঃ মোফাজেল হোসেনের - প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দক্ষতার অভাব, তাঁর প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন কাজে ধীর গতি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতির কারনে সরকারের অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ সফলতা আসেনি। এ নিয়ে খোদ কৃষি মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত প্রকল্পটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। এ সব কিছু বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ডঃ মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান তাঁর দপ্তরের স্মারক নং- ১২.১২.০০০০.০০০.০৩০.১৬.০০০১.২৪.৯১ তাং ১৯.০৮.২০২৮ খ্রীঃ তারিখে - উক্ত প্রকল্পের জন্যে নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে যথাক্রমে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ফোকাল পয়েন্ট এবং ডিপিপি প্রণয়নকারী) ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ এটি এম সাখাওয়াত হোসেন ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোঃ মামুনুর রহমান- এর নাম প্রস্তাব করে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন। ঐ প্রেরিত প্রস্তাব পত্রের প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রনালয় সর্ব্বোচ্চ আশাবাদী মনোভাব নিয়ে ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেনকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
ব্রির- “নতুন ০৬ টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং -বিদ্যমান গবেষণার উন্নয়ন” - শীর্ষক প্রকল্পটির ব্রীর একটি-জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্রণয়নকারী ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেনকে বাঁদ দিয়ে কেন ডঃ মোঃ মোফাজ্জল হোসেনকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ করা হলো? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়- বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে রাজনৈতিক পরিচয়ের অজুহাতে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক এর পারিবারিক বন্ধুর নিকট আত্মীয় হিসেবে ডঃ মোঃ মোফাজ্জেল হোসেনকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। একইসাথে বিএনপি পন্থি কৃষিবিদ হিসেবে পরিচিত প্রকল্প প্রনয়নকারী ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন কে বাদ দেয়া হয়। ব্রির এর প্রকল্পটির ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়-প্রাথমিক ভাবে ১৭ টি স্থানে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষনার উন্নয়ন"-শীষক প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে পর্যাপ্ত অর্থ সংস্থান বিবেচনায়-১১টি স্থান বাদ দিয়ে ৬ টি স্থানে কার্যালয় নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ প্রকল্পে ডঃ মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করায় বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট এর কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিজ্ঞানীরা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা প্রকল্পটির উজ্জল সম্ভাবনা নিয়ে এই প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছেন।
"বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনটিটিউট (ব্রি) ইতোমধ্যে প্রনয়ন করেছে- Rice Vision 2050 and Beyond and Doubling Rice Productivity in Bangladesh".
কর্ম পরিকল্পনা, যার অন্যতম লক্ষ্য দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষিকে টেকসই পথে এগিয়ে নেয়া। বর্তমানে দেশে প্রায় ৮.৮৫ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমির মাধ্যমে ১৭৫.৭ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা হয়। ২০৫০ সালে এই জন সংখ্যা বেড়ে দাড়াবে ২১৫.৪ মিলিয়নে। তখন প্রয়োজন হবে প্রায় ৪৪.৬ মিলিয়ন টন চাল। সেখানে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উৎপাদন ছিল ৩৯.৫ মিলিয়ন টন চাল। এ ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় হলো-প্রতিবছর কৃষি জমি প্রায় ০.৩৬ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে জমি, শ্রম, মাটির উর্বরতা এবং পানির মতো প্রাকৃতিক স¤পদের ঘাটতি - সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব- যেমন খরা, লবনাক্ততা, বন্যা, অতিরিক্ত তাপ ও শীত-ধান উৎপাদনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় উক্ত প্রকল্প কার্যক্রমের আওতায় - ব্রি স্থান ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম জোরদার হবে। যাতে স্থানীয় উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন, সব কৃষি অঞ্চলকে সমান গুরুত্বে গবেষণার আওতায় আনা, স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান প্রদান ব্রির উদ্ভাবিত নতুন জাত ও প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব “-এমন সম্ভাব্যর কথা বলেছেন- ডঃ মো. আনোয়ার হোসেন।
ব্রির - নতুন ০৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থান ভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষনার উন্নয়ন-শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ডঃ মো. আনোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেখায় তিনি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রতিনিধিকে বলেন- “আমি ব্রির মহাপরিচালক ডঃ মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ও মাননীয় কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদান উল্লাহ মিয়ান স্যারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি"।
উল্লেখ্য যে- ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মো. আনোয়ার হোসেন ২০০৫ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিতে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্ম জীবনে তিনি জাতি সংঘের আওতাধীন ইউএন এসক্যাপ (UN-ESCAP) এর এনটাম (ANTAM) কার্যক্রামের অধীনে কৃষি যন্ত্র পরীক্ষার মান নির্ধারন কোড প্রনয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহন-কারী ১৭ টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তিনি ২০২২ সাল থেকে টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (TWG) এর অধীনে কম্বাইন হারভেস্টার ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার গ্রুপের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আমার বার্তা/এমই