বাংলাদেশ-ব্রাজিল পরিবেশ, জলবায়ু ও বাণিজ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদার

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  রানা এস এম সোহেল:

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০) সফল করতে ব্রাজিলের নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাংলাদেশও উচ্চাভিলাষী, তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু ফলাফলের লক্ষ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। 

রিজওয়ানা হাসান রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্রাজিলের ২০৩তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যম কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে ব্রাজিল বর্তমানে লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য ব্রাজিলীয় তুলায় অধিকতর বাজার সুবিধা, বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, ওষুধ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। সম্প্রতি একটি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিকে ব্রাজিল কর্তৃক অনুমোদন প্রদানকে তিনি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ব্রাজিলের সরকার ও জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের স্বাধীনতা অর্জন ছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি গণতন্ত্র, সাম্য, জলবায়ু উদ্যোগ ও বহুপাক্ষিকতায় ব্রাজিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৭২ সালের ১৫ মে ব্রাজিল ছিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম দেশগুলোর একটি যারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক- যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌরো ভিয়েরার ঢাকা সফর, বাংলাদেশ কর্তৃক ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জি-২০ নারী ক্ষমতায়ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিনের ঢাকা সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।

তিনি বাংলাদেশের মানুষের ব্রাজিলীয় ফুটবলের প্রতি অনুরাগের কথা তুলে ধরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বাণিজ্য, গণতন্ত্র, জলবায়ু উদ্যোগ ও সংস্কৃতিতে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ব্রাজিল বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস তার বক্তৃতায় বলেন,

“এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলকের চেয়েও বেশি, এটি একটি সুযোগ যে ব্রাজিল কীভাবে বাংলাদেশের আরও টেকসই, ন্যায্য এবং আন্তঃসংযুক্ত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সাথে পাশাপাশি হেঁটেছে তা প্রতিফলিত করার জন্য।

“এবং ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে, আমি এমন একটি ঘটনা তুলে ধরে শুরু করছি যা কেবল ব্রাজিলের জন্যই নয়, বরং গ্রহের জন্যও একটি মাইলফলক হবে: COP30, যা ২০২৫ সালের নভেম্বরে ব্রাজিলের আমাজনের ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বেলেম দো পারা শহরে অনুষ্ঠিত হবে,” তিনি বলেন।

পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস আরও বলেন, “এই প্রসঙ্গে, আমাকে আমাদের সুপিরিয়র কোর্ট অফ জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিনের গত মার্চে বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করতে হবে, যিনি বিচারক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, বরং পরিবেশ আইনের প্রতি গভীর আগ্রহের অধিকারী একজন আইনজ্ঞ হিসেবে।”


আমার বার্তা/এমই