ঠিকাদার নিয়োগে মহাদুর্নীতি চলমান, দ্রুত তদন্ত দাবি ভুক্তভোগীদের

ঢাকা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২২:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

  মুনিরুল তারেক:

# সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে মান্নান-চুন্নু
# দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠন

ঢাকা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) অফিসে বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদারের মাধ্যমে এই দুর্নীতির প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও (ডিজি) দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অবৈধ অর্থের একজনও ভোক্তা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা ডিজি'র বরাবর অভিযোগ দিলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে অধিদপ্তর। তবে কমিটি রিপোর্ট দেয়ার আগেই তরিঘরি করে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজ দ্রুতগতিতে চলে বলে নির্ভরযোগ্য গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছে। ঠিকাদাররা মনে করেন, এই তদন্ত কমিটি দায়সারা ও লোক দেখানো। কাজের কাজ কিছুই হবে না।

তালিকাভুক্ত একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, নিয়মিত সিডিউল বিক্রয় প্রক্রিয়ার মধ্যেই নানামুখী অনিয়ম চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল টেন্ডারিং-এর পুরো ব্যবস্থাকে নিজেদের দখলে রেখেছে।

অভিযোগকারী ঠিকাদাররা জানান, সময় মতো সিডিউল সংগ্রহ করতে গেলে সিডিউল বিক্রয়কারী কর্মকর্তা ফারুক নামের এক কর্মকর্তা সচেতনভাবে সিডিউলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ—আর্থিক দরপত্রের কাগজ—তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে রাখেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়টি ঠিকাদার সমিতির সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়া আইনগতভাবে সম্পূর্ণ বেআইনি।

সূত্র জানায়, ঠিকাদার সমিতির নেতৃত্বে থাকা মান্নান ও চুন্নুর নেতৃত্বে এই দুর্নীতির সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। ফারুকের কথা মত মান্নান–চুন্নু গ্রুপের কাছে গেলে তারা জানায় যে সিডিউলে থাকা আর্থিক দরপত্রের অংশ তারা নিজেদের কাছে রেখে দেবে এবং নির্দিষ্ট তারিখের (২৩ অক্টোবর ২০২৫) মধ্যে অন্যান্য কাগজসহ পূরণ করা সিডিউল তাদের কাছে জমা দিতে হবে। এরপর তারা দরপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পূরণ করে টেন্ডার জমা দেবে বলে ঠিকাদারদের জানানো হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য ঠিকাদার সমিতির চুন্নু মিয়াকে মোবাইলে কল করলে তিনি অফিসে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। পরে অসংখ্যবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এভাবে প্রায় ৮৫০ জন তালিকাভুক্ত ঠিকাদার বাধ্য হয়ে আরসি ফুড অফিসের দ্বিতীয় তলার ওয়েটিং রুমে অস্থায়ীভাবে বসা ওই সমিতি-নিয়ন্ত্রিত দলের কাছে সিডিউল জমা দেন। ঠিকাদারদের দাবি, ২২ ও ২৩ অক্টোবরের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলেই এসব কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মিলবে।

অভিযোগ আরও রয়েছে, ২৬ অক্টোবরের টেন্ডার ড্রপিংয়ের দিন প্রতিটি সিডিউলই আর্থিক দরপত্র ছাড়া জমা নেওয়া হয়, যা আইন অনুযায়ী পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াকে বাতিলযোগ্য করে তোলে। কিন্তু সিন্ডিকেটটি তাদের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতিটি আর্থিক দরপত্রে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে গোপনে দরপত্রের অংশ পূরণ করছে। নতুনভাবে কাজ পেতে আগ্রহী প্রায় ২৫০ জন ঠিকাদারের কাছ থেকে এভাবে আনুমানিক ১২ কোটি ৫০ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন বলেন, টেন্ডার কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে। আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অধিদপ্তর তদন্ত করছে, তারা সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবে।

খাদ্য অধিদপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য উপ-পরিচালক রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। কমিটির আহ্বায়ক বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।

অভিযোগকারীরা দ্রুত আরসি ফুড অফিসে জমা থাকা সিডিউল জব্দ করে তদন্ত শুরুর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এখনো অনেক অনিয়মের স্পষ্ট প্রমাণ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তারা এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরদারি কামনা করছেন।


আমার বার্তা/এমই