দীর্ঘ আট বছর পার হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যার বিচার না হওয়ায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার বাবা মোঃ জয়নুল আবেদীন ও মা মোসাম্মৎ ফাতেমা আক্তার। এসময় তারা জড়িতদের সার্টিফিকেট বাতিল, চাকরি থেকে বরখাস্ত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে খালিদ সাইফুল্লাহর মা মোসাম্মৎ ফাতেমা আক্তার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত মো: রেজাউল ইসলাম মাজেদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব চন্দ্র দাস, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মাসুম, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রুপম দেবনাথ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ফয়জুল ইসলাম ফিরোজ, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুদীপ্ত নাথ, জাহিদুল ইসলাম জুয়েল, আবু বকর ছিদ্দিক সহ অন্যান্য জড়িতদের সার্টিফিকেট বাতিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান।
এছাড়া খালিদ সাইফুল্লাহর মা মোসাম্মৎ ফাতেমা আক্তার বলেন, 'আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের আইনের মাধ্যমে বিচার চাই। আমার ছেলের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি পেয়েছে। তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে চাকরি পান? আমি আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সার্টিফিকেট বাতিল চাই। আমি সকলকে আইনের আওতায় এনে সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। অথচ আমার ছেলেকে হত্যার পর সংবাদ মাধ্যমে তাকে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাহলে আজ পর্যন্ত কেন ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার করল না? আমার ছেলের নামে কেন একটা হল বরাদ্দ হলো না, কেন আমার ছেলের নামে একটা রাস্তা হলো না? আমার ছেলে যদি সত্যিই ছাত্রলীগ হয়ে থাকত তাহলে কেন তার কোনো স্মৃতি চিহ্ন নাই? আমি কুমিল্লা জেলার জামায়াতের মজলিসের একজন সদস্য, দুইবার জামায়াতের দাউদকান্দি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছি।'
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে তিনি খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চাকরিদাতা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীরও শাস্তি দাবি করেন।
খালিদ সাইফুল্লাহর বাবা মোঃ জয়নুল আবেদীন বলেন, 'আমরা পুত্রহারা অভাগা ২০১৬ সালের ১লা আগস্টের রাত ১২ টায় পুত্র হারিয়েছি। কিন্তু আজও তার বিচারের সুরাহা হয়নি। বিচারের কোনো আশা এখনো দেখছি না। আশা করি বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের পুত্র হত্যার ন্যায়বিচার পাবো।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বর্তমান সরকার এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এই নির্মম হত্যাকান্ডের সুবিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি।'
খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফা নাজনীন বলেন, 'গত ৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ তদন্তকারী হিসেবে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। মামলাটা যথারীতি অগ্রসর হচ্ছে এবং এটার সুফল ভালোই পাওয়া যাবে। যারা অপরাধী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।'
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ০১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের অন্তর্কোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ।
আমার বার্তা/এমই