ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
শনিবার (৩১ মে) বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং সাম্প্রতিক রাজনীতি বিষয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “ঢাবি শিক্ষার্থীরা যে নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের উপযুক্ত ক্যাম্পাসের আকাঙ্ক্ষা বারবার প্রকাশ করে এসেছে। সে রকম ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং ন্যাক্কারজনক নানা ঘটনা ঘটার পরও তাদের গা-ছাড়া মনোভাবের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাবিধানে তাদের অযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণের যে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে এই প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল, সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার ব্যর্থতা এই প্রশাসন কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে এই শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তার বিষয়ে দায়িত্বশীল উপাচার্য ও প্রক্টর অবিলম্বে পদত্যাগ করে যোগ্যতর ব্যক্তিদের এই গুরুদায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিতে হবে। পাশাপাশি নতুন প্রশাসনের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলার যৌক্তিক দাবি আবারো আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরছি।”
গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তির ভাষ্যমতে শহীদ সাম্যকে যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, তখন ঘটনাস্থলে কতিপয় পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল। সাম্যকে ছুরিকাঘাতের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা খুনিদের আটকে রেখে ওই পুলিশ সদস্যদের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু পুলিশ তা না করে খুনিদের ছেড়ে দিতে উৎসাহিত করে।”
গণেশ চন্দ্র রায় সাহস আরো বলেন, “সাম্য হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। ক্রাইম সিনের জায়গাটি ভোর পর্যন্ত অরক্ষিত রাখা, রমনা কালী মন্দির, বাংলা একাডেমি ও তার আশেপাশের কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ার মতো অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো আরো সন্দেহজনক করে তোলে।”
ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “সাম্য হত্যার প্রায় ১৩ দিন পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে তথ্য উপস্থাপন করে, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। সেখানে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহীদ সাম্যকে হত্যা করা হয় একটি ছোট্ট টেজার গান দিয়ে। অথচ কর্তব্যরত ডাক্তারের ভাষ্যমতে শহীদ সাম্যের উরুতে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারুভাবে তার ‘ফিমোরাল আর্টারি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী কেটে দেওয়া হয়। ফলে মাত্র দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে। পরিচয় দেওয়ার পরও একজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও সুপরিচিত ছাত্রদল নেতাকে তুচ্ছ বিষয়ে আক্রমণ করে পেশাদার উপায়ে হত্যা করার পেছনে অন্য কোন ষড়যন্ত্র আছে কি না- তা স্পষ্ট করে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে ডিএমপি।”
ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নানা উপায়ে লুকিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অনীহা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই শহীদ সাম্যের মতো একনিষ্ঠ সহযোদ্ধাকে হারানোর পর লক্ষ্য করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি আবাসিক হলগুলোতে নানাভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে এবং চিহ্নিত করে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।”
“হাজারো প্রাণের বিনিময়ে যে ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশ আজ মুক্ত হয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদী শক্তির জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে, দেয়ালে বিরাট আকারে লেখা হচ্ছে সেই ঘৃণ্য খুনিদের দলীয় স্লোগান,” যুক্ত করেন সাহস।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আমার বার্তা/এল/এমই