‘যশোরের দুঃখ’ খ্যাত ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জলবালয়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চল পরিদর্শনকালে এ কথা জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা একসঙ্গে এই অঞ্চল পরিদর্শনে এসেছেন। তাদের সঙ্গে সচিবরাও উপস্থিত রয়েছেন।
পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফ করেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, গতবারের মতো এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খননকাজ শুরু হবে।
রিজওয়ানা হাসান জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল এরইমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এই এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সেসময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য এরইমধ্যে ভিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ বিষযে মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামেন তিন উপদেষ্টা। এরপর তারা এই অঞ্চলের ধানক্ষেত পরিদর্শন করেন।
তবে তার আগে থেকেই ভবদহ পাড়ের মানুষেরা ভবদহ স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এসময় তারা দ্রুত টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালুসহ স্থানীয় নদীগুলো খনন করার দাবি জানান।
যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানের পানি এসব নদী দিয়ে নামতে পারে না। ফলে নদী উপচে সেই পানি বিল-মাঠ ছাপিয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে।
বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের।
এই অঞ্চলের চার লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে, স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
আমার বার্তা/এল/এমই