কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় আবারও হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। তিস্তা ব্যারেজের ডোমার পয়েন্ট থেকে আকস্মিকভাবে পানি ছেড়ে দেয়ায় বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে চিনা বাদাম, পাট, মরিচসহ বিভিন্ন রবিশস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার (২ জুন) দুপুরে পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে বহু কৃষকের ক্ষেতের ফসল ভেসে যায়। রবিবার (১ জুন) দুপুর থেকেই পানি বৃদ্ধি শুরু হয়, যা সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বিশেষ করে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ, তৈয়বখাঁ, চর রামহরি এবং ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ ও গতিয়াসামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানির নিচে চলে গেছে।
চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, “২ একর জমিতে চিনা বাদাম করেছি ধার করে। কিন্তু সব পানির নিচে। কিছুই তুলতে পারবো না।” একই অভিযোগ কৃষক ফয়জার উদ্দিন, মানিক মিয়া, রফিকুল ইসলাম, ময়নাল ও আব্দুল কাদেরের। তাদের প্রত্যেকের ২ থেকে ৪.৫ একর জমির বাদাম ডুবে গেছে কিংবা ভেসে গেছে। মানিক মিয়া বলেন, “রাতে দেখি প্রায় সব বাদাম ক্ষেত থেকে ভেসে গেছে। এবারে অনেক ক্ষতিতে পড়েছি।”
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরাঞ্চলে ১৭৫ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম, ২০ হেক্টর জমিতে পাট, ৩ হেক্টরে মরিচ এবং ৫ হেক্টরে শাকসবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাদাম ও মরিচের ক্ষেত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন, “হঠাৎ করে পানি বাড়ায় চরের কিছু অংশ ডুবে গেছে। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে অবস্থান করছেন। কৃষকদের চিনা বাদাম দ্রুত তুলে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমেই এটি দ্বিতীয়বারের মতো বন্যার পানি চরাঞ্চলে প্রবেশ করলো। এর আগেও একইভাবে পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল বিস্তীর্ণ রবিশস্যের জমি, যা কৃষকদের জন্য ছিল এক বড় ধাক্কা। কৃষকরা বলছেন, বারবার ফসলহানির ফলে তারা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন এবং এখন প্রয়োজন সরকারের জরুরি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ।