জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সংস্থাটির চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ বাদী হয়ে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক ইয়াসিন আরাফাত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এই টাকা ঋণ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, ড. মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক পরিচালক খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান, সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
অন্য আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, ব্যাংকটির বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাকতাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাকতাই শাখা প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী এবং দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামি- মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মালিক মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং কর্পোরেশানের মালিক মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সে মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সর মালিক এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউজের মালিক এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউজের মালিক ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের মালিক আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউজের মালিক মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউজের মালিক মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী এবং ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক কাজী মেজবাহ উদ্দিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে এস আলম সংশ্লিষ্ট মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরোওয়ার চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকের চাকতাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরের মাসে ওই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই না করে তা অনুমোদন করেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর জাল কাগজ তৈরি করে এই ঋণের জন্য আবেদন করে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ। এই ঋণ অনুমোদন করা হয়। কোনো প্রকার যাচাই না করেই পূর্বপরিকল্পনা মাফিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই অনুমোদন করেন। প্রথমে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হলেও পরে সেটা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ যে বিনিয়োগের কথা বলে ঋণ নিয়েছিলেন তা না করে এস আলম তার বিভিন্ন ব্যবসায় ঋণ পরিশোধ ও করেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।
আগে গত ২১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
ইসলামী ব্যাংকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। নিয়ম না মেনে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিন শাখা থেকে ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ঋণ দেওয়া হয়। দুদকে এ অভিযোগ জমা হওয়ার পর কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসির আরাফাতকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেন।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির অনুসন্ধান গতি পায়। এরপর গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
আমার বার্তা/এমই