
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার শাহজাহান রোডের একটি বাসায় মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে ঘটে এই হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় পুলিশ এক তরুণীকে সন্দেহ করছে, যিনি মাত্র চার দিন আগে ওই বাসায় অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে ওই বাড়িতে বোরকা পরে প্রবেশ করেন আয়েশা নামের ওই তরুণী। হত্যাকাণ্ডের পর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রিকশা নিয়ে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের সামনের সড়ক দিয়ে পালিয়ে যান।
মোহাম্মদপুর এলাকার শাহজাহান রোডের ‘আমিনাস ড্রিম’ নামের ওই বাসার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গেট দিয়ে বেরিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ওই তরুণী। এরপর গেটের সিকিউরিটি গার্ড ঈসমাইল তাকে ডাকলে আবার গেটে আসেন। পরে দ্রুত একটি রিকশা নিয়ে পালিয়ে যান।
জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডিতে সানবীমস ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ফিজিক্সের শিক্ষক আজিজুল ইসলাম। সোমবার সকালে শাহজাহান রোডে তার বাসায় স্ত্রী মালাইলা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন তরুণী মাত্র চার দিন আগে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই জনকে হত্যা করে ওই তরুণী পালিয়ে গেছেন।
আজিজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, সকালে তিনি স্কুলে চলে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দরজার তালা খুলে ভেতর ঢুকে পুরো বাসা রক্তাক্ত দেখতে পান। প্রথমে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। পরে রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তার স্ত্রী। মেয়ে নাফিসাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ এসে মালাইলা আফরোজের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘চার দিন হলো এই মেয়ে এই বাসায় কাজ নিয়েছে। সিকিউরিটি গার্ড খলিল তাকে কাজে নিয়োগ দেয়। তিন দিন আগে বাসায় চাবির গোছা হারিয়ে যায়। আমার স্ত্রী নতুন করে চাবি বানানোর কথাও বলছিল। তবে ওই গৃহকর্মীর কোনও ফোন নম্বর বা ভোটার আইডি আমাদের কাছে নেই।’
নাফিসার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন তার সহপাঠীর বাবা ইসতিয়াক হায়দার। তিনি বলেন, ‘নাফিসা আমার মেয়ের বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী। আজ পরীক্ষা ছিল। স্কুলে সবাই নাফিসার জন্য অপেক্ষা করছিল। খবর শুনে ছুটে এসেছি। মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। শুনেছি বাসায় চাবির গোছা হারিয়ে গেছে। একটি কাঠের আলমারি ভাঙা ছিল। ওই নারী আসলে গৃহকর্মীর ছদ্মবেশে ডাকাতি করেছে। খুন করার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে পালিয়েছে।’
ওই বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড ঈসমাইল বলেন, ‘সকালে এই নারী বোরকা পরে আসেন ও ম্যাডামের বাসায় ফোন দিতে বলেন। ফোন দেওয়ার পর ম্যাম ওপরে পাঠাতে বলেন, আমি পাঠিয়ে দেই। এর প্রায় ৪৫ মিনিট পর সাদা রঙের স্কুলড্রেস পরা এক নারী পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়। সন্দেহ হলে তাকে ডাক দিলে সে ওই বাসার পরিচয় দেয়। পরে রিকশা করে চলে যায়।’
খলিল নামে এক বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড তাকে সেখানে কাজে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গেছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, অভিযুক্ত ওই গৃহকর্মীর নাম আয়েশা। অস্ত্র দিয়ে ভুক্তভোগীদের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। অস্ত্র ধারালো হওয়ায় ক্ষত বেশি হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ধারালো ছুরি বাথরুমের বালতি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক বলেন, ‘নিহতরা (মা-মেয়ে) ভবনের সাত তলায় বসবাস করতেন। গৃহকর্তা আজিজুল সকালে কাজে বের হয়ে যান। এরপর দুপুরে বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। মেয়ে নাফিসাকে জীবিত অবস্থায় পেলেও হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়।’
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যার কারণ জানতে কাজ করছে পুলিশ। এছাড়া মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
আমার বার্তা/এমই

