এক কোটি ৪৫ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে মাত্র ৪৫ লাখ রিটার্ন জমা দেন জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ‘কোনো জবাবদিহি নেই, কোনো নোটিশ নেই, কোনো অ্যাসেসমেন্ট নেই। আমি কমিশনারদের বলি আপনারা নোটিশ করছেন না কেন? আমার তো এখন উল্টো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে যারা রিটার্ন দেন তারা কেন দেন?’
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
কর আদায়ে ভুল পথ অনুসরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আগে পলিসিকে খুব অ্যাগ্রেসিভলি ব্যবহার করেছি। আমাদের ওপর কর আরোহণের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতো এটা আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে টেবিলে বসেই সব পেয়ে যাবো। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কাজ করে দেবেন। এনবিআরের কোনো অপারেশনাল কাজ করা লাগবে না।
ব্যাখ্যা দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলে, ‘তথ্যপ্রমাণ দিলে বুঝবেন, যারা রিটার্ন সাবমিশন করেছেন তার দুই-তৃতীয়াংশই হলো নন-ট্যাক্সএবল। অনলাইনের ১৫ লাখের রিটার্নের মধ্যেই ১০ লাখই শূন্য রিটার্ন। কাগজে রিটার্নে ও একই চিত্র। ২০১৪ সালে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখের নিচে। এখন সেটা এক কোটি ১৪ লাখ পার হয়ে গেছে। তার মানে ১০ বছরে এক কোটি টিআইএনধারী বেড়েছে। রিটার্ন না দিলে কোনো সমস্যা হয় না। কোনো জবাবদিহি নেই, কোনো নোটিশ নেই, কোনো অ্যাসেসমেন্ট নেই। আমি কমিশনারদের বলি আপনারা নোটিশ করছেন না কেন। আমার তো এখন উল্টো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে যারা রিটার্ন দেন, তারা কেন দেন? রিটার্ন না দিলে যেহেতু কোনো অসুবিধা নেই, রিটার্ন দেন ৪৫ লাখ, আর দেন না ৯০ লাখ মানুষ। তাহলে রিটার্ন যারা দেন তারা কেন দেন? এটা বড় প্রশ্ন।’
আমাদের অপারেশনাল ইফিসিয়েন্সি, ফাংশনাল কম্পিটেন্স এগুলো অ্যাপ্লাই করে যে কর আদায় সেটা থেকে আমরা সরে এসেছি, যোগ করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা পুরোপুরি অনলাইন রিটার্নে যাবো। আগামী পহেলা জুলাই থেকে অনলাইন রিটার্ন শতভাগ আবশ্যিক করে চালু হয়ে যাবে। এখনও প্রতিদিন তিন হাজার, সাড়ে তিন হাজার করে রিটার্ন জমা পড়ছে। এখনও নতুন করদাতারা রেজিস্ট্রেশন নিচ্ছে। তারা রিটার্ন দিচ্ছে, তাদের জন্য তো কোন জরিমানা নেই।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, মোট ভাড়া মূল্যের ভিত্তিতে বাড়িভাড়া আয় পরিগণনা ও সূত্র পরিহার করতে হবে। এ সংক্রান্ত ধারাটি পুনর্গঠিত করতে হবে।
সবার জন্য ট্যাক্স এডুকেশন জরুরি জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর নিয়ে জানাশোনা না থাকলে, করদাতারা সচেতন হয় না। আমরা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে কর নিয়ে পড়াশুনা চালু করতে চাই। আমরা চাই এটা পাঠ্যপুস্তকে আসুক। কোমলমতি শিশুরা ছোটবেলা থেকেই জানুক কর কী? কর দেশের কী কাজে লাগে। আরেকটু অ্যাডভান্স লেভেলে ট্যাক্সের অঙ্ক থাকবে। এগুলো আমরা করতে চাই। আমরা জনসচেতনতা তৈরি করতে চাই।
এনবিআরের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস বলেন, বর্তমানে এলাকাভিত্তিক একটি ন্যূনতম কর আছে। কোথাও দুই হাজার, কোথাও পাঁচ হাজার। এটার একটা সমস্যা আছে। কেউ ঢাকায় চাকরি করেন, কিন্তু থাকেন অন্য কোনো জেলায়। পুলিশের লোকদের অনেক সমস্যা হয়। এখানে স্ল্যাব না রেখে, একটা নির্দিষ্ট করা উচিত। করলে ৫ হাজার টাকা হবে সারা বাংলাদেশে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটার সঙ্গে আমি একমত। ঢাকায় যার আয় বেশি তার খরচ বেশি। এই করহার উল্টো হওয়া উচিত। মফস্বলে যারা থাকেন তাদের খরচ কম। সিঙ্গেল রেট নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।
অপূর্ব কান্তি দাস বলেন, আমেরিকায় রিটার্ন দেওয়াটা একটা উৎসব। তারা রিফান্ড পায়, সেই টাকায় তারা ভ্রমণে যায়। বাংলাদেশেও এমন উদাহরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এছাড়া রিটার্ন ও ট্যাক্স নিয়ে জানতে একটি অ্যাপসও করা যেতে পারে।
আমার বার্তা/এমই