খেলাপির বড় অংশ সরকারি ব্যাংকে হলেও আমানতে আস্থা কমেনি গ্রাহকের। গত ৯ মাসে ডিপোজিট সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। সঠিক পথে পরিচালনার কারণেই সংকট হয়নি বলে মত কর্মকর্তাদের। এছাড়া পদোন্নতিতে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য ও খেলাপি আদায়ের শর্তে ব্যাংকারদের মধ্যে জাগরণ তৈরি হয়েছে বলেও মত তাদের। সুশাসন নিশ্চিত হলে ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর আশা অর্থনীতিবিদদের। খেলাপি বাড়লেও সরকারি ব্যাংকে আস্থা, ৯ মাসে আমানত বেড়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রের প্রতিটি খাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষত। বিশেষ করে ব্যাংক খাত। একদিকে আমানত সংগ্রহ, অন্যদিকে অনিয়ম করেই ঋণের নামে লোপাট হয়েছে লাখ লাখ কোটি টাকা। খেলাপির সঠিক তথ্য গোপন রেখেও প্রতারণা করা হয় সাধারণ গ্রাহকের সঙ্গে।
ধীরে ধীরে ব্যাংক খাতের খেলাপি অর্থের পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ। উঠে আসে মার্চ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ২৪.১৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪৫ শতাংশ খেলাপি সরকারি ব্যাংকগুলোতে। এতকিছুর পরও ভঙ্গুর সরকারি ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমেনি গ্রাহকদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৪ ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ হয়েছে ৩৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ফিরেছে আস্থা। অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল বাশার বলেন, ব্যাংকগুলো স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরছে। ব্যাংকগুলো স্থিতিশীল হলে দেশের আর্থিক অবস্থায় গতি আসবে।
এদিকে প্রথমবারের মতো কর্মীদের আমানত সংগ্রহের টার্গেট দেয়া, খেলাপি আদায়ে প্রণোদনাসহ উপশাখা করার উদ্যোগ নিয়েছে খেলাপির ভারে নুয়ে পড়া জনতা ব্যাংক পিএলসি। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বলেন, কর্মীদের আমানত সংগ্রহের টার্গেট দেয়ার চিন্তা চলছে। সেখানে একজন ডিপোজিট সংগ্রহ করতে পারলে বা টার্গেট পূরণ করতে পারলে ৫ পয়েন্ট পাবে; অর্ধেক করতে পারলে আড়াই পাবে। এমন হবে। যে পারফর্ম করবে তার পয়েন্ট বেড়ে যাবে। অর্থাৎ সে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী খাটতে বাধ্য।
গাইডলাইন মেনে চললে সম্পদশালী ব্যাংকগুলো এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আবারও শক্তিশালী হবে বলে আশা অর্থনীতিবিদদের। অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, লোন নিয়ে অনিয়ম করার প্রবণতা ধীরে ধীরে কমছে। আগে যেমন ওপর থেকে অর্ডার দিলেই লোন পাস হয়ে যেত, সেটি এখন নেই। এ ধারা চলামান রাখতে পারলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সম্পদশালী ব্যাংকগুলো শক্তিশালী হবে।
সরকারি ব্যাংকে জানুয়ারি-মার্চ কোয়ার্টারে আমানত বাড়লেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
আমার বার্তা/এল/এমই