তালেবান শাসনে নতুন মাত্রার নিপীড়নের মধ্যে আফগান নারীরা যখন বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন, ঠিক তখনই তাদের সমর্থনে নিজের কণ্ঠ সোচ্চার করেছেন মালালা ইউসুফজাই।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই পাকিস্তানি নারী অধিকারকর্মী সম্প্রতি বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি নারীদের অধিকার এতো সহজে সংকুচিত হয়ে যাবে!’
মালালা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, অনেক মেয়েই এখন এমন এক হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে তারা কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের কাছে ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।
২০০১ সালের ৯/১১-র পর মার্কিন বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে পুনরায় ক্ষমতায় আসে তালেবান। এই ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর থেকেই জাতিসংঘ যেটাকে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ বলে অভিহিত করেছে, আফগানিস্তানে তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যেখানে নারীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার। গত আগস্টে জারি করা এক বিধান অনুযায়ী, নারীদের মুখ ও শরীরের মতো বাড়ির বাইরে তাদের আওয়াজও ‘নিচু স্তরে রাখা’ উচিত বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে না। যা দেশটিতে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৮০ শতাংশ।
এ বিষয়ে মালালা বলেন, ‘এই বিধিনিষেধগুলো ব্যাপক চরম পর্যায়ের, যদিও তা কারো কাছেই অর্থবহ নয়’। তিনি বলেন, এখানকার নারীরা সবকিছুই হারিয়েছে। তারা আসলেই (তালেবান) জানে যে, নারীদের অধিকার কেড়ে নিতে হলে প্রথমেই শিক্ষা থেকে শুরু করতে হবে।
আফগান নারীদের পক্ষে প্রচার চালানোর অংশ হিসেবে মালালা অ্যাপল টিভি প্লাসে নারী-কেন্দ্রিক তথ্যভিত্তিক সিনেমা ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’-এর নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। এই সিনেমাটি তিন আফগান নারীর জীবনের নিপীড়ন ও সংগ্রামের গল্প তুলে ধরেছে, যারা তালেবান শাসনের অধীনে বসবাস করছেন।
তাদের মধ্যে জাহরা হলেন একজন দন্তচিকিৎসক। যিনি তার পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তারানম একজন কর্মী, যিনি সীমান্তের দিকে পালিয়ে যান। আর শারিফা একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন, যিনি তার চাকরি ও স্বাধীনতা উভয়ই হারিয়েছেন।
তাদের গল্পগুলো আফগান নারীদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে বলেই উল্লেখ করেন মালালা। তিনি বলেন, ‘এটি প্রায় ২ কোটি আফগান মেয়ে ও নারীর গল্প, যাদেরকে হয়তো কখনও পর্দায় দেখা যাবে না’।
সিনেমায় দেখানো নারীরা যদিও আফগানিস্তানে বসবাস করছেন না। তবে মালালা আশা করেন, তাদের গল্প দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
২৭ বছর বয়সি এই নারী অধিকারকর্মী বলেন, ‘তারা তাদের অধিকার আদায় ও তাদের কণ্ঠ তুলে ধরার জন্য যা সম্ভব তাই করেছে। তারা অনেক কিছুই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে লড়াই করছে। এখন আমাদের সময় এসেছে তাদের বোন ও সমর্থক হওয়ার’।
ব্রেড অ্যান্ড রোজেস পরিচালনা করেছেন আফগান চলচ্চিত্র নির্মাতা সাহরা মানি। মালালার সঙ্গে মার্কিন অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্সও প্রযোজক হিসেবে এতে যুক্ত হয়েছেন।
সিনেমাটি ২২ নভেম্বর থেকে সারা বিশ্বে স্ট্রিমিংয়ে দেখা যাবে। সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
আমার বার্তা/এমই