২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল, নিজের প্রথম শাসনামলের ৯৯তম দিনে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসের সঙ্গে আইন পাসের জটিলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি একেবারে পুরোনো আর কঠিন এক ব্যবস্থা।’ এই ঝামেলা এড়িয়ে চলা ‘জাতির জন্য কল্যাণকর’ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্প সেই ‘পুরোনো ব্যবস্থাকে’ দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রথম ১০০ দিনেই ট্রাম্প দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী ক্ষমতার জোরে নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম বড় শুল্কবৃদ্ধি, ফেডারেল প্রশাসনের ব্যাপক ছাঁটাই ও বিরোধীদের দমন-নীতির মাধ্যমে তিনি নিজের ক্ষমতার দৃশ্যমান ব্যবহার করেছেন। যদিও উল্লেখযোগ্য কোনো আইন পাস হয়নি, তবুও বিশ্লেষকদের মতে, আধুনিককালে কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম ১০০ দিন এতটা প্রভাববিস্তারকারী হয়নি।
২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের এই স্বেচ্ছাচারী উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উত্তাল লড়াই চলবে। আদালতগুলোতে একাধিক মামলা বিচারাধীন, যার নিষ্পত্তিতে মাসের পর মাস লেগে যাবে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও কিছু আইনি প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করতে পারে। তবে এরই মধ্যে কিছু জেলাস্তরের বিচারকের আদেশকে অমান্য করার মতো উদ্বেগজনক ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
দুর্বল ও পক্ষপাতদুষ্ট কংগ্রেস
বর্তমান কংগ্রেস এতটাই পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছে যে, তারা নিজেদের সাংবিধানিক ক্ষমতাও রক্ষা করতে পারছে না। বহু বছর ধরে তারা বাণিজ্য, ফেডারেল সংস্থা ও যুদ্ধ সংক্রান্ত ক্ষমতা স্বেচ্ছায় হস্তান্তর করেছে। এখন রিপাবলিকান সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলেও নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস করছেন না। কংগ্রেসের দ্বিদলীয় সমর্থনে পাস হওয়া টিকটক বিক্রির আইনকেও ট্রাম্প অবজ্ঞা করেছেন।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, তিনি কংগ্রেস অনুমোদিত বাজেট বরাদ্দ অব্যবহৃত রেখে নিজস্ব নীতির পক্ষে ‘ইমপাউন্ড’ করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা কংগ্রেসের অর্থ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
শেষ ভরসা সর্বোচ্চ আদালত
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের লাগাম টানার ভার পড়েছে আদালতের ওপর। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের ওপর। রাজনৈতিক বিশ্লেষক লি ড্রুটম্যান মনে করেন, ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের পথ খুঁজছেন। বিশেষ কোনো মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যদি তার বিরুদ্ধে রায় দেয়, ট্রাম্প সেই রায় উপেক্ষা করতে পারেন—যা সরাসরি সংবিধানের অবমাননা হবে।
আগামী মাসে সুপ্রিম কোর্ট জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টা নিয়ে শুনানি করবে। মার্কিন সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, ‘যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ বা স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিক হবে,’ তাই এই মামলায় ট্রাম্পের জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
২০২৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা টিকে থাকবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তাই এ সময়ের মধ্যে কংগ্রেসের পক্ষে আত্মরক্ষা সম্ভব নয়। যদি ট্রাম্পের নীতির কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ও জনগণের অসন্তোষ বাড়ে, তবেই পরিস্থিতি পাল্টানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। ততদিন পর্যন্ত সংবিধান রক্ষার গুরুদায়িত্ব থাকবে প্রধান বিচারপতি রবার্টস ও তার সহকর্মীদের ওপর। কলমের শক্তি ও ক্ষমতার বিভাজনের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে লড়ে যেতে হবে তাদের।