শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে বিশেষ করে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিকারের উপায়ের সন্ধান করেন অনেকে। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মালবেরি বা তুঁত ফল। গ্রীষ্মকালীন ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু ফল মালবেরি। স্বাদের পাশাপাশি মালবেরি ফলের অনেক গুণাগুণও রয়েছে। যা এই গরমে সুস্থ এবং সতেজ থাকতে সাহায্য করতে পারে।
মালবেরিকে এক প্রকার ‘ওষধি’ বললেও মন্দ হয় না। অনেক রকম জটিল রোগও দূর করার ক্ষমতা রাখে এই ফল। যেমন, ডায়াবেটিসের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, কোলেস্টেলের সমস্যা, ওজনজনিত সমস্যা। এখানেই শেষ নয়, এই ফল কিডনি, ফুসফুসের মতো অঙ্গগুলিকেও ভাল রাখে। এমনকী ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া আটাকানোর ক্ষেত্রেও কার্যকারী এই ফল।
ভেষজ উদ্ভিদ মালবেরি বা তুঁতে ঔষধি গুনাগুণ সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবেনা। তুঁতের কয়েকটা প্রধান ঔষধি ব্যবহার হল – রক্তের টোনিক তৈরি, মাথা ঘোরা, কোষ্ঠকাঠিন্য, টিনিটাস, মূত্রথলিজনিত সমস্যার সমাধান ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়।
মালবেরি গাছের বোটানিকাল নাম মরাস অ্যালবা হিসাবে পরিচিত। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যার গড় উচ্চতা ৪০-৬০ ফুট হয়। এর ফুলগুলি খুব নিখুঁতভাবে সাজানো। যা পরবর্তীতে বেগুনি কালো রঙের ফল দেয়। মালবেরি ফল দেখতে অসম্ভব সুন্দর। প্রাচীনকালে মালবেরি গাছের বাকল দিয়ে কাগজ তৈরি হতো।
মালবেরির আদিবাস চীনে। ভারত, বাংলাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে মালবেরিফলের চাষ হয়ে থাকে। মুলত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মালবেরি বা তুঁতের চাষ হয়, বিশেষ করে রাজশাহীতে বেশি চাষ হয় কারণ সেখানে বাংলাদেশ রেশম চাষ উন্নয়ন বোর্ড অবস্থিত। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য অঞ্চল হল নাটোর। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া মালবেরি ফল বেশি সুস্বাদু।
ফ্যাটবিহিন সুমিষ্ট স্বাদযুক্ত এই ফলটি খুবই পুষ্টিকর। মালবেরি গাছের পাতা রেশম, গুটি পোকার প্রিয় খাদ্য। মালবেরি ফল খুবই রসালো, নরম, মিষ্টি টক ও সুস্বাদু, কাচা ফলের রং সবুজ, কিন্তু পাকলে টকটকে লাল ও সম্পূর্ণ পাকলে কালচে হয়ে যায়। কাচা পাকা ফল যখন গাছে প্রচুর ধরে থাকে তখন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সৃষ্টি করে। সারা বছরই ফল দেয়। অল্প দিনের মধ্যেই ফল পাকে। পাকা ফল রসালো এবং টক-মিষ্টি ।
মালবেরি গাছের ফল সাদা বর্ণের, পাকলে হালকা গোলাপি সাদা বর্ণ ধারণ করে। এ ফল টক নয়, স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসালো। মূলত এ প্রজাতির মালবেরি ফলের জন্য চাষ করা হয়। পাকা মালবেরি ফলের রস থেকে জ্যাম, জেলি ও স্কোয়াশ বা পানীয় তৈরি করা যায়।
মালবেরি ফলের জুস, জ্যাম জেলি হয়। মালবেরি ফলের জুস খুবই সুস্বাদু । জুসটি কোরিয়া, জাপান ও চায়নায় অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মালবেরি বা মালবেরিকে ‘ব্ল্যাক বেরি’ বলে চড়া দামে চারা বিক্রি করা হয়। এখন অনেক বাসার ছাদেও শোভা পাচ্ছে মালবেরি গাছ। শালিক, টিয়া, বুলবুলি, টুনটুনি ও অনেক পাখিরই খুব প্রিয় ফল মালবেরি।
অনেকেই এই উদ্ভিদের রোপণ করে থাকেন। এই উদ্ভিদ থেকে লাল, কালো ইত্যাদি বিভিন্ন বর্ণের ফল পাওয়া যায়। তবে এর যে স্বাস্থ্য গুণাবলী রয়েছে, তা অনেকেরই অজানা।
মালবেরি বা মালবেরি একটি ফ্যাটবিহীন ফল। এতে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক এবং ভিটামিন এ, সি, ই, বি ৬, বি ৩, এবং কে ইত্যাদি খনিজ এবং ৮৮% জল রয়েছে। মালবেরি ফলের মধ্যে রয়েছে ১.৪% প্রোটিন, ৯.৫% কার্বোহাইড্রেট এবং ১.৭% ফাইবার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। মালবেরি ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় তা ক্ষুধা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এর ডায়েটরি ফাইবার হজম প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে চলতে, হৃদরোগের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
মালবেরি আয়রনে সমৃদ্ধ, তাই এর গ্রহণে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে রক্তাল্পতা রয়েছে, এমন মানুষদের জন্য এই ফলটি অত্যন্ত উপকারী।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা মালবেরি ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফল বায়ু ও পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক। মালবেরি গাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক।
ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উভয়ই উপস্থিত মালবেরিতে – সুতরাং, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য এই ফলটি খুবই প্রয়োজনীয়।
মালবেরি ফলে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
মালবেরি ফলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ক্যারোটিনয়েডগুলো ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে তোলে এবং ত্বকের বলিরেখা ও দাগ দূর করে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতেও মালবেরির জুড়ি মেলা ভার।
প্রতিদিন একটি মালবেরি ফল খেলে আপনার শরীরে চিরন্তন যৌবনের বজায় থাকবে। এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল নির্গত করে।
যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্যও মালবেরি ফল অত্যন্ত কার্যকর।
এতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলো ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। সুতরাং, ক্যানসারের মতো রোগ নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই ফল।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও মালবেরি ফলের ক্ষমতা লক্ষণীয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরাও নিশ্চিন্তে এই ফলটি খেতে পারেন। গবেষণায় জানা গিয়েছে, মালবেরি ফলের চা পানের ফলে শর্করার মাত্রা কমাতে দ্রুত সাহায্য করে। এই চায়ে রয়েছে ডিএনজে (১-ডিঅক্সিনোজিরিমাইসিন) নামক যৌগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। মালবেরি চা পাতা পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল ব্লাড গ্লুকোজ-এর মাত্রাকেও হ্রাস করতে সাহায্য করে।
আমার বার্তা/জেএইচ