বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত পাঁচ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় এক হাজারটি গবেষণা নিবন্ধ। গবেষণায় এমন ধারাবাহিক সাফল্য র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির আশা জাগাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং’ বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউ উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং কোনো বিলাসিতা নয়, এটি এখন সময়ের দাবি। আন্তর্জাতিক পরিসরে জায়গা করে নিতে হলে আমাদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়ন অপরিহার্য। র্যাঙ্কিং মানেই এক ধরনের প্রতিযোগিতা, যেখানে টিকে থাকতে হলে কৌশল, পরিকল্পনা, এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা লাগবে।
>> র্যাঙ্কিংয়ে সফল হতে টেস্ট ম্যাচের মতো ধৈর্য ও কৌশল লাগবে
অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, এই র্যাঙ্কিং প্রক্রিয়াকে আমি ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করি। এখানে দ্রুত কিছু করা যায় না। ছোট ছোট সাফল্য, ধৈর্য, পরিশ্রম আর সম্মিলিত দক্ষতা দিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের সমন্বিত অংশগ্রহণ ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি এখনই সক্রিয় না হই, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় আমাদের নাম চলে যাবে। কিন্তু আমরা তা চাই না। বরং আমরা চাই—বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে। এই লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়নেও গতি আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা অর্জন তুলে ধরে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আমরা প্রায় এক হাজারটি গবেষণা নিবন্ধ আন্তর্জাতিক ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশ করতে পেরেছি। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ। আমাদের শিক্ষকদের গবেষণার মান, সাইটেশন ও আন্তর্জাতিক সংযোগও ইতিবাচকভাবে বাড়ছে।
>> দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হতে চায় বিএমইউ
দৃঢ় কণ্ঠে উপাচার্য বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই—বিএমইউকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাতারে নিয়ে যাওয়া। এজন্য আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, সামর্থ্য আছে—এখন দরকার পরিকল্পিত ও প্রতিশ্রুতিশীল কাজ।
ডা. শাহিনুল আলমের মতে, শুধুমাত্র গবেষণা করলেই চলবে না—তা যথাযথভাবে ডকুমেন্ট করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে, এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সফল হতে হলে প্রতিটি বিভাগের তথ্য, কাজ এবং অবদান সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ডকুমেন্টেশন একটি কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ, তবে র্যাঙ্কিংয়ে ফল পেতে হলে এটিই একমাত্র পথ।
>> শিক্ষা-গবেষণা ও ডকুমেন্টেশনে জোর দেওয়ার আহ্বান
সভায় র্যাঙ্কিং বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং র্যাঙ্কিং কমিটির সদস্য সচিব ডা. ফারিহা হাসিন, পিএইচডি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্ধারণে শুধু গবেষণা নয়, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি, শিল্পখাত থেকে আয়, সাইটেশন, ডকুমেন্টেশন এবং তথ্য হালনাগাদ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি উল্লেখ করেন, র্যাঙ্কিংয়ে ভালো করতে হলে প্রতিটি বিভাগকে নিজ নিজ তথ্য হালনাগাদ ও প্রামাণ্যভাবে উপস্থাপনের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে ঠিকই, তবে তা উপেক্ষা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সফলতা পেতে হলে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
গবেষণা ও উন্নয়ন-সংক্রান্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, র্যাঙ্কিংয়ে ভালো করতে হলে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও তার সঠিক প্রকাশনা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি আমাদের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টদের সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।
সদিচ্ছা ও সমন্বিত কাজের ওপর গুরুত্বারোপ করে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির পেছনে নির্ভর করে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর। আমরা যদি আন্তরিকভাবে একসঙ্গে কাজ করি, তবে র্যাঙ্কিংয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব।
সভায় র্যাঙ্কিং কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দও তাদের মতামত ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন। সবাই একমত হন যে, বিএমইউকে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে নিতে হলে গবেষণা, শিক্ষা ও তথ্য ডকুমেন্টেশনের ওপর জোর দিতে হবে।
আমার বার্তা/এমই