ই-পেপার শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম কমে যাওয়ার পেছনে দায়ী কে?

কমল চৌধুরী:
২২ জুন ২০২৪, ১৬:০৩

কোরবানীর পশুর দাম ও চামড়াজাত পণ্যের দাম দিনে দিনে অব্যাহতভাবে বৃদ্বি পেলে ও কমছে চামড়ার মূল্য । সঙ্গতকারণে প্রশ্নের উদ্রেক করছে এর পেছনে দায়ী কে? সরকার নির্ধারিত দামে ব্যবসায়ীরা চামড়া না কেনার কারণে বিক্রেতারা ও চামড়া শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।ঈদে পশু কোরবানির পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে চামড়া বেচাকেনার কাজ। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার চাহিদা ও দাম কমার কারণে এ বছর থেকে লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারন করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব কাঁচা চামড়া বিক্রিতে পড়েনি বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে এসব গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ২০০ পিস চামড়া নিয়ে পোস্তা এলাকায় এসেছিলেন ব্যবসায়ী মনসুর মিয়া। দাম বাড়িয়ে সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দেয়ায় মনসুরের আশা ছিল এবার বাড়তি দাম পাবেন তিনি। তিনি বলেন, এবার আশা ছিল একটু বাড়তি দাম পাব। কিন্ত এখানে এসে দেখি চামড়ার চাহিদাই কম। সে কারণে দাম পাচ্ছি না খুব একটা, তবে পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছে, সরকার লবনযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের বাড়তি খরচ হওয়ায় তারা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের খুব একটা দাম দিতে পারছেন না।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়ার দাম এতো কম কেন? চামড়ার দাম কমায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা। কোরবানির চামড়ার বেঁধে দেওয়া দামে ভরসা নেই কেন? বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, প্রতি পিচ চামড়া লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের খরচ হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীদের যুক্তি কাঁচা চামড়া কেনার পর তার পেছনে যে খরচ হয় সেই খরচ মেটাতে গিয়ে তারা গত বারের চেয়ে বাড়তি দাম দিতে পারছেন না। কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে কাঁচা চামড়া ? রাজধানী জুড়ে যে সব পশু কোরবানি হয় তার একটা বড় অংশ বিক্রি হয় পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায়। কোরবানির দিন দুপুরের পর থেকে এই এলাকায় আসতে শুরু করে পশুর চামড়া। সাভারের হেমায়েতপুরে তৈরি হয়েছে আরেকটি ট্যানারি সমিতি।

গত কয়েক বছরে সেখানেও বেড়েছে বেচা কেনা। রাজধানীর পোস্তায় প্রতি গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার ছোট গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০টাকা দরে। চলতি বছর কোরবানির সময় এক লাখ ৬০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তদারেরা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী নাদিম ৫০ পিচ গরুর চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন পোস্তা এলাকায়। পোস্তার আড়তদাররা বেশি দাম চামড়া দিয়ে চামড়া কিনতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও তার কাছে মনে হয়েছে।গত সোমবার বিকেলে একই অবস্থা ছিল আমিন বাজারের ট্যানারি পল্লীতে। রাজধানীর চামড়ার বাজারগুলোতে ঈদের দিন কম দামেই কাঁচা চামড়া বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় যে গরু কেনা হয়েছে সে সব গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল গড়ে ৫০০ টাকা দরে। ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকা দরে। আর তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম সর্বোচ্চ দেখা গেছে সাড়ে নয়শো টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা দরে। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, কাঁচা চামড়া কেনার পর তার পেছনে আমাদের যে খরচ হয় সেটা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জানার কথা। কিন্তু তারপরও তারা কম দামে কেনার অভিযোগ করেন। দাম বাড়ানোর পরও কেন এমন পরিস্থিতি? পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চলতি মাসের শুরুতে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় বর্গফুট প্রতি চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণ যুক্ত চামড়ার দাম ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের লবণ যুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২৫০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। কিন্তু রাজধানী ঢাকার কাঁচা চামড়ার বাজারে গত মঙ্গলবার গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে দাম কমার কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, সরকার লবনযুক্ত চামড়ার দাম বাড়িয়েছে সে কারণে অনেক হিসেব নিকাশ করে তাদের কাঁচা চামড়া কিনতে হয়। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, "শ্রমিক খরচ, দোকান ভাড়া, লোডিং আনলোডিংসহ সব ধরনের খরচ বেড়ে যাওয়া আমরা চাইলেও এর চেয়ে বেশি দামে কিনতে পারি না। নিশ্চয়ই লোকসান করে কেউ এই ব্যবসা করবে না।

চামড়া শিল্পে পরিবর্তন আসবে কবে?

সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।২০১৭ সালের পর থেকে কাঁচা চামড়ার কদর কমেছে। গত বছরও একই দশা ছিল। রাজধানীসহ সারা দেশেই কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন কোরবানিদাতারা। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সড়কে ফেলে দেয় এবং কেউবা মাটিতে পুঁতে ফেলে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, এবারের ঈদুল আজহায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪ লাখের বেশি পশু জবাই হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৫০ হাজারের মতো গরু-মহিষ এবং বাকিগুলো খাসি, বকরি, ভেড়াসহ অন্যান্য পশু। গত বছর ঈদুল আজহায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। সরকার লবনযুক্ত চামড়ার দাম বাড়ানোর ফলে কিছুটা লাভবান হবেন পোস্তার ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মি. খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত বছর আমরা চামড়া কিনেছি ১ লাখ ১৮ হাজার পিস। এবার আমাদের ১ লাখের পিসের বেশি কেনা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে । কোরবানির পশুর এই চামড়া অনেকেই দাতব্য প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা কিংবা এতিমখানায় দান করেন। এই চামড়ার টাকা দিয়ে এতিম শিশুদের ভরণ পোষণও চলে। চামড়া সঠিক দামে বিক্রি করতে না পারলে দুশ্চিন্তায় পড়েন বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানও। ঢাকার বনশ্রী নূরানী আদর্শ মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল ওহাব বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চামড়া আসছে বেশি। কিন্তু দাম দিন দিন কম পাচ্ছি। এতে আমাদের তেমন কোন লাভ হচ্ছে না ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি।

আমার বার্তা/এমই

জাতিসংঘে নোবেল বিজয়ী ড.ইউনূস ও বাংলাদেশ

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ

জাতিসংঘ ৭৯তম অধিবেশন ও ইউনূস-বাইডেন বৈঠক

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ৭৯তম

অন্তর্বর্তী সরকারের মনোবল ধরে রাখাই এ সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ

একটা সময় পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনকালে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিত। সে বিধান এখন নেই। এ

আর কত প্রাণ গেলে বন্ধ হবে গুজবের ঝড়

তাল কে তিল করা বাঙালি জাতির স্বভাব। কিছু হলেই গুজব রটিয়ে যায় আর এতে ইন্ধন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৬০

ভেঙে ফেলা হলো লালবাগ ক্লাবের পুরনো ভবন

পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও বাড়ি ভাড়া দেওয়ার দাবি

সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আহ্বান

নির্বাচিত সরকারই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে: তারেক রহমান

নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করলো হিজবুল্লাহ

নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবরে নিরাপদ স্থানে খামেনি

সমালোচনার মুখে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত কমিটি বাতিল

১০ম গ্রেড আমাদের দাবি নয়, আমাদের অধিকার

জনগণের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা ওয়াসা ঠিকাদার সমিতির আহবায়ক কমিটি গঠন

জাতিসংঘে নোবেল বিজয়ী ড.ইউনূস ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর

রাষ্ট্রপতি ও দলীয় বিচারপতিদের অপসারণ দাবি

ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত: স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি

চুরি করার জন্য প্রজেক্ট বানানোই ছিল আগের সরকারের কাজ

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন

নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে: হাসান আরিফ