ই-পেপার রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

আধুনিক যুগের কুসংস্কার কোটা প্রথা

সাহীদ বিন আহমদ:
০৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:৫৩

বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দেখেনি আলবদর, আলশামস। জানেনা রাজাকাররা কি কারণে পাকিস্তানিদের সমর্থন দিয়েছিল। কুসংস্কার যেমন সমাজকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়, ঠিক তেমনি কোটা ব্যবস্থাও বর্তমান সময়ে সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যাকে আমরা আধুনিক যুগের কুসংস্কার বলতে পারি।

অধিক যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কোটাধারীকে সুযোগ করে দেওয়া শুধু এই কারণে যে তার দাদা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এই আধুনিক কুসংস্কার একটি দেশকে পিছিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছে। তবে দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে যারা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। দেশের প্রতিটা স্তরের মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। লক্ষ্য একটাই, দেশকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তোলা।

মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলো। তাদের এই ত্যাগের মাঝে ছিল না কোনো কৃত্রিমতা। তাদের লক্ষ্যই ছিল একটা তা হলো দেশকে বৈষম্যমুক্ত করে নতুন শান্তির নগর হিসেবে গড়ে তোলা। বাঙালির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ এসেছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিঘাত করতে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের প্রতিটা পরিবার ভয়ে ছিল কখন না পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়। শুধু যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে তাদেরই অবদান দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এমনটা ভাবলে বোকামিই হবে বলা চলে। যুদ্ধের সময় তো এমনও অনেক পরিবার ছিল যারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলো। আমরা কি তাদের অবদান অস্বীকার করবো! ঐ মুহূর্তে এই সামান্য আশ্রয়টাই অনেক বড় ভূমিকা ছিল বললে ভুল হবে না। এমনিভাবে প্রতিটি পরিবারের ভূমিকা ছিল দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে। তবে আমরা তাদের এই অবদানকে তুলে আনার চেষ্টাও করিনি। একথা ধ্রুব সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদের রয়েছে ভিন্ন মর্যাদা সেটা অনস্বীকার্য। আমাদের রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বুকে সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছে তেমনি বর্তমান যুগে এসেও তাদের পরিবার পরিজনেরা নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এমনটা আশা করা যেতেই পারে। কোনো কোটা ব্যবহার করে, পূর্ববর্তীদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের বীর পূর্বসূরিদের সাহসিকতার অপমান অবশ্যই করবে না। তবে এমন চিত্র কি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে? যাদের এই বিবিধ কোটা আছে, তারা দিনের পর দিন বিভিন্নভাবে এই কোটা ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। একেবারে প্রাইমারি থেকে শুরু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি এবং সরকারি চাকরিতে যোগদান করার ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করে যাচ্ছে। এটা কি বৈষম্য নয়? এটাকে কি আমরা আধুনিক সমাজের কুসংস্কার বলতে পারি না?

বাঙালিরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলো বলেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অপরিহার্য মনে করেছিলো। বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কোটা ব্যবস্থা। পূর্ব বাংলার লোকেরা সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ তথা তাদের প্রাপ্য টা বুঝে পেতো না এই কোটা ব্যবস্থার কারণে। বর্তমানেও তো একই অবস্থাই দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে। সরকারি চাকুরিতে ২৫৮ প্রকারের কোটা রয়েছে এবং ৫৬% কোটা প্রথম শ্রেণির চাকরিতে। তবে কি আমাদেরকে আমাদের পূর্বসূরিদের মতো দেশরক্ষায় নামতে হবে? তারা যেমন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তেমনি বর্তমান সময়ে এসেও এই বৈষম্যই যদি রয়ে যায়, তাহলে স্বাধীনতার মর্ম কোথায়?

মূলত দেশমাতৃকাকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তোলার জন্যই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলো বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তবে কি বর্তমানে বৈষম্যহীন সমাজ, দেশ গঠন করার প্রত্যয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে? যদি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমাদেরও এখন শেখ মুজিবুরের মতো নেতৃত্ব প্রদানকারী কাউকে প্রয়োজন। আর এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছে ছাত্রসমাজ। আমরা ইতিহাসে তাকালে দেখতে পাবো তৎকালীন সময়েও ছাত্রসমাজ বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো, পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে। তারা সফলও হয়েছে বটে।

আজ শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা বললে হবে না। স্বাধীন দেশে কত শত রকমের কোটা তথা কুসংস্কার রয়েছে যা বর্তমান রেখে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা অকল্পনীয়। বর্তমান ছাত্রসমাজ যেভাবে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আন্দোলন করছে তা কোনো দিক থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম নয় বরং বেশি বলা চলে। কোটা প্রথাকে কবর দিতে তারা খালি হাতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই আন্দোলনে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের সম্মতি প্রয়োজন।

এরাও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। তারা দেশকে বর্তমান রাজাকার, আলবদর থেকে দেশকে মুক্ত করার আগ পর্যন্ত লড়াই করেই যাবে। আর যারাই এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বর্তমান রাখতে চাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা আলবদর, আলশামস আর রাজাকার বাহিনী থেকে অভিন্ন ভাববো না? ছাত্রদের দাবি যৌক্তিক। প্রতিবন্ধী কোটা রাখা যেতে পারে। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী কোটায় যোগ্য লোক পাওয়া না গেলে, যোগ্য মেধাবীকে ঐ পদে নিযুক্ত করতে হবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীরা যেমন অবদান রেখেছিলো, তারাও চেয়েছিলো বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে, তেমনি বর্তমান নারীরাও চাচ্ছে এবং বলছে, “আমরাও এখন আর পিছিয়ে নেই, আমরাও যোগ্যতা ও দক্ষতায় বিশ্বাসী, কোনো কোটায় সুযোগ পেয়ে নারী জাতিকে অপমান করতে রাজি নই।”

আমরা বলতেই পারি, কোটা নামক আধুনিক যুগের কুসংস্কারকে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে দূর করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান যুগের মুক্তিযোদ্ধারূপে আবির্ভূত হয়েছে ছাত্রসমাজ।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/সাহীদ বিন আহমদ/এমই

মোবাইল ছেড়ে বই পড়ি

বই পড়া শব্দদ্বয় দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি বিষয় বোঝানো হয়। সেগুলো হলো আমাদের পাঠ্যবই যা ছাত্রাবস্থায়

রক্ত দিয়েও যে দেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি

শত শত মানুষের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্ত হলো দেশ। জীবনবাজি রেখে নতুন করে

প্রকৌশল পেশায় প্রহসনের ছক: বঞ্চনার বৃত্তে বন্দি প্রকৃত ইঞ্জিনিয়ার

বর্তমানের বিশ্বে যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হলো সেই দেশের ইঞ্জিনিয়াররা।

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

রাষ্ট্রকে পরিবার হিসেবে দেখার চিন্তা মানবিক রাষ্ট্র গঠনের এক আকর্ষণীয় রূপক। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো তাঁর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানে বিস্ফোরণের ঘটনায় চার জন নিহত, আহত বেড়ে ৫৬১ জন

ক্যান্সার রোগীদের দীর্ঘ সময় ভালো রাখা' র ঔষধ!

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে বিএনপির

চরফ্যাশনে বিপুল পরিমাণ গলদা ও বাগদা রেনু জব্দ

‘কাশ্মীরে হামলা সাজানো’ বিস্ফোরক মন্তব্য ভারতীয় সেনার

আ.লীগকে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি করা: ফুয়াদ

নতুন ভোটার ৬৩ লাখ, বাদ গেল ২৩ লাখ মৃত ভোটার

গজারিয়ার বাউসিয়ায় বিএনপি কর্মীদের ঈদ পুনর্মিলন মতবিনিময় সভা

পৌনে দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক

বিদ্যুতের লোডশেডিং হলেও মাত্রা সহনীয় থাকবে: ফাওজুল কবির

কর্ণফুলীতে হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

দেশেই ভবিষ্যৎ গড়বে শিক্ষার্থীরা, নেতৃত্ব দেবে বিশ্বকে: শিক্ষা উপদেষ্টা

রুয়া নিয়ে একদল চূড়ান্ত নোংরামি শুরু করেছে: রাবি উপাচার্য

ববি অধ্যাপককে অব্যাহতির প্রতিবাদে বরিশালে মানববন্ধন

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচের দল ঘোষণা বাংলাদেশ ‘এ’ দলের

নারী সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্যে বিচারের দাবি

বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

নাটকীয় জয়ে ফাইনালে মোহামেডান, অপেক্ষায় আবাহনী

কুমার নদের বালু উত্তোলনকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি শামা ওবায়েদের

অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ-চার্জিং স্টেশন বন্ধে শুরু হচ্ছে অভিযান