ই-পেপার রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

রাজনীতি কি একটি পেশা?

সাইফুল্লাহ হায়দার:
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৫

বর্তমান সময়ে রাজনীতি এবং পেশা, এ দুটি শব্দ যখন একসাথে উচ্চারিত হয়, তখন আমাদের অনেকের কাছে প্রশ্ন ওঠে: রাজনীতি কি আদৌ একটি পেশা হতে পারে? প্রশ্নটি সঙ্গত, কারণ যখন আমরা রাজনীতি শব্দটির সাথে পরিচিত হই, তখন মনে হয়, এটি শুধু জনগণের সেবা, আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেমের ফলস্বরূপ। কিন্তু দিন দিন রাজনীতি একটি পেশার রূপ নিতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন কিভাবে ঘটছে এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করা জরুরি।

রাজনীতি এবং পেশার পার্থক্য : প্রাচীনকালে রাজনীতি ছিল একটি ব্রত, একটি মহৎ উদ্দেশ্য যেখানে জনগণের সেবা এবং দেশপ্রেম ছিল প্রধান লক্ষ্য। তখনকার রাজনীতিবিদরা নিজেকে দেশের কল্যাণে উৎসর্গ করতেন এবং তাদের জীবনে কোনো ব্যক্তিগত লাভের আশা ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের সেবা, দেশের উন্নয়ন, এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রাজনীতির সংজ্ঞা বদলে গেছে।

বিশ্বের অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো রাজনীতির সংজ্ঞাও পরিবর্তিত হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকেও অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের কোনো নির্দিষ্ট পেশা ছিল না। তারা শুধুমাত্র রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু আজকাল দেখা যায়, রাজনীতির সাথে অনেক নেতাই ব্যবসা বা অন্যান্য পেশায় যুক্ত হয়ে আছেন। তারা ভোটের রাজনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত আর্থিক লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করছেন, যা রাজনীতি ও পেশার মধ্যে সীমারেখা একেবারে মুছে দিয়েছে।

ম্যাক্স ওয়েবারের দৃষ্টিকোণ : বিখ্যাত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে এক বক্তৃতায় রাজনীতির অর্থে নতুন এক দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেছিলেন। ওয়েবার বলেছিলেন, "রাজনীতি একটি পেশা"। তার মতে, রাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য বা জনপ্রিয়তার জন্য রাজনীতি করেন না। তাদের নৈতিক মেরুদণ্ড থাকা উচিত এবং তারা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। ওয়েবারের দৃষ্টিকোণ থেকে, রাজনীতির উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ এবং সমাজের উন্নতি হওয়া উচিত, নয়তো তা হবে কেবল ক্ষমতার লোভ।

এছাড়াও, ওয়েবার বলেছেন, একজন রাজনীতিবিদ শুধুমাত্র ভোট পাওয়ার জন্য অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। তাদের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য থাকা উচিত এবং তারা যখন ইতিহাসের পরিবর্তনের দিকে এগোবেন, তখন তাদের কাছে হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব এবং বিচার করার ক্ষমতা। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে অনেকেই শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেন, যা বেশিরভাগ সময় বাস্তবে রূপ নেয় না।

১৯৭১ থেকে ২০১৮: রাজনীতিতে পেশাদারিত্বের পরিবর্তন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এবং ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজনীতিতে পেশাদারিত্বের পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৩১ শতাংশ ছিলেন আইনজীবী, ১৮ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী, এবং কৃষক পরিবারের সদস্যরা ছিল ১১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে ৩১ শতাংশ আইনজীবী কমে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এবং ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশ হয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে রাজনীতির পেশার পরিবর্তন ঘটেছে এবং ব্যবসায়ী শ্রেণির প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে।

এছাড়া, ২০২৩ সালের নির্বাচনে আরও ভয়াবহ পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, যেখানে ব্যবসায়ী এবং মাফিয়া শ্রেণির সদস্যদের আধিক্য দেখা গেছে। তাদের এই প্রভাব দেশের রাজনীতির চেহারা বদলে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রাজনীতি এখন শুধুমাত্র ক্ষমতা অর্জনের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক নেতা এখন ব্যবসা বা অন্যান্য পেশা নিয়েই রাজনীতি করছেন, যার ফলে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য দেশ ও জনগণের সেবা থেকে সরে গিয়ে তা ব্যক্তিগত লাভের দিকে চলে গেছে।

নবীন রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি : এখনকার রাজনীতির চিত্র আরও জটিল। পেশাগতভাবে যারা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। তারা পেশার মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটি রাজনীতির জন্যও কাজে লাগান। এই পরিস্থিতি একটি কঠিন বাস্তবতা তৈরি করছে, যেখানে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার অভাব বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যারা রাজনীতির মাধ্যমে প্রকৃত জনগণের সেবা করতে চান, তাদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ অনেক বড়।

এখনকার রাজনীতিতে যদি পেশা এবং উপার্জনকে আলাদা করা না যায়, তবে একদিন হয়তো রাজনৈতিক দলের নেতারা শুধুমাত্র টিকিট পাওয়ার জন্যই রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন, এবং জনগণের সেবা বা উন্নতি হবে না। এই পরিস্থিতি সমাজের জন্য উদ্বেগজনক।

রাজনীতি যদি একটি পেশা হয়ে যায়, তবে তার সঙ্গে সম্পর্কিত দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বও পাল্টে যাবে। আর্থিক লাভের জন্য যারা রাজনীতি করছেন, তাদের কাছে জনগণের সেবা একটি নৈতিক দায়িত্বের চেয়ে ব্যবসায়িক চুক্তির মতো হয়ে দাঁড়াবে। এটি দেশের রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, যদি নতুন প্রজন্মের নেতারা বৈধভাবে উপার্জন করে এবং তাদের উদ্দেশ্য থাকে জনগণের সেবা, তবে সেই রাজনীতি সমাজের জন্য কল্যাণকর হতে পারে।

লেখক: কেন্দ্রীয় সংগঠক, জাতীয় নাগরিক কমিটি।

আমার বার্তা/সাইফুল্লাহ হায়দার/এমই

এদেশে স্বাধীনতার উৎস ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই সৃষ্টি

”মা  মা মাত কারো,ইয়ো জবান খামোশ রহেগা” ,ইত্যাদি দম্ভোক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা শাসকরা বাঙ্গালিদের মায়ের ভাষাকে

অনন্য জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী 

ধানের মানুষ ড. আবেদ চৌধুরী একজন স্বনামধন্য, বিশ্ববরেণ্য বাঙালি জিন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানলেখক এবং কবি। দীর্ঘদিন

খাদ্যে ভেজাল : বর্তমান অবস্থা ও আমাদের করণীয়

কেউ কেউ থাকেন এই জনজাতির অন্যতম দুর্বলতা হচ্ছে আমরা চালাক-বোকা। কথাটি রহস্য করে বলা হলেও

গণমানুষের দল বিএনপি : নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। দীর্ঘসময় ধরে দেশটির রাজনৈতিক,
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় বাদ পড়া ২২৭ জন বিসিএস ক্যাডার

ভাঙা আঙুলের কুনিম্যানের কাছে শ্রীলঙ্কার লজ্জার হার

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের হামলায় ২২ জান্তা সেনা নিহত

রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে পিছিয়ে গেলে দেশ ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে

কুমিল্লায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত

রোববার অর্ধবেলা হরতালের ডাক ইনসানিয়াত বিপ্লবের

রোববার অর্ধবেলা হরতালের ডাক ইনসানিয়াত বিপ্লবের

বিষয়ভিত্তিক সেরা লেখক স্বীকৃতির আয়োজনের প্রস্তাব ড. ইউনূসের

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে যা বললেন জিএম কাদের

দলে যেনো আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা ঢুকতে না পারে: ফখরুল

রাজনীতি কি একটি পেশা?

মহাখালী সড়ক অবরোধ করলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

পাকিস্তানে রাতভর সংঘর্ষে ১৮ সেনাসহ নিহত ৪১ জন

আইএফআইসি ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

দল গঠন করতে চাইলে সরকারের দায়িত্ব ছেড়ে দিন: আবদুস সালাম

বিজয়ের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা নেই, কোয়াবের সহযোগিতা চায় ২ ক্রিকেটার

গর্ব করে বলবো বাংলাদেশের তরুণরা পৃথিবীতে অদ্বিতীয়: ইসি

আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

শিল্পের মর্যাদা আসবে শিল্পীর মর্যাদার মাধ্যমে: ফরিদা আখতার