ই-পেপার শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাবনা

ইতুমনি:
১২ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮

বাংলাদেশের পাটশিল্প একসময় বিশ্ববাজারে সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত ছিল।বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাট শিল্পের গুরুত্ব ঐতিহাসিকভাবে অপরিসীম। একসময় পাট ছিল দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় কৃত্রিম তন্তুর আগ্রাসন, নীতিগত দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার কারণে এ শিল্পের গতি কমে যায়।তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

পাট একটি প্রাকৃতিক তন্তু যা ১০০% বায়োডিগ্রেডেবল এবং পরিবেশবান্ধব। এর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কম, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। পাট চাষ বায়ুমণ্ডল থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম, যা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়তা করে। বর্তমানে পাট থেকে নানাবিধ পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে, যেমন: পাটের ব্যাগ, জিও-টেক্সটাইল, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক, কম্পোজিট বোর্ড, আসবাবপত্র, কার্পেট, রোপ, জুতা, পোশাক, খেলনা এবং গাড়ির অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। এসব পণ্য কৃত্রিম প্লাস্টিক ও সিন্থেটিক উপকরণের টেকসই বিকল্প হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে,যা পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশ সরকার পাটশিল্পের উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘোষণা করেন যে, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাটজাত পণ্যের মোড়কের বহুল ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ৯১ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। এর মধ্যে কাঁচা পাটের রপ্তানি ছিল ২০ কোটি ডলার, পাটের সুতার রপ্তানি ৩০ কোটি ডলার, পাটের বস্তার রপ্তানি ১১ কোটি ডলার এবং অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি ১০ কোটি ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের মোট চাহিদার ৪২% পূরণ করেছে, যা থেকে আয় হয়েছে ৯১ কোটি ডলারের বেশি। এছাড়া, পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২% এখন বাংলাদেশের দখলে। তবে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার কমে ৬৬.৯২ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

কাঁচামালের সংকট: চাষিদের পর্যাপ্ত প্রণোদনা না থাকায় অনেকেই পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে পাটপণ্য উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়।

বাজারজাতকরণের সমস্যা: আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং ও বিপণন দুর্বল হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। তবে, পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে কাঁচা পাট কেনার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের যে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয় তা বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া, পাটকলের আধুনিকায়ন, নতুন পণ্যের নকশা উন্নয়ন এবং গবেষণায় বিনিয়োগের মাধ্যমে এ খাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানের চাহিদা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ অবস্থান তৈরি করতে পারে। বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা টেকসই এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি পণ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন, যা বাংলাদেশের পাটপণ্য শিল্পের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ, গৃহসজ্জার সামগ্রী, আসবাবপত্র ও ফ্যাশন পণ্য হিসেবে পাটের চাহিদা বেড়েছে।

কাঁচা পাটের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, নকশা ও বহুমুখীকরণে সীমাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ও সরকারি নীতির ধারাবাহিকতার অভাব অন্যতম সমস্যা। পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন প্রয়োজন। এছাড়া, উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে পাটপণ্যের মান বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশে পাটপণ্য উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হলেও, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়।

সরকার পাটশিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালে পলিথিনের পরিবর্তে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের আইন করা হলেও বাস্তবায়নের অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। ২০২৫ সালে সরকার নতুন করে পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিচ্ছে। পাটকে "কৃষিপণ্য" হিসেবে ঘোষণা করায় কৃষকরা সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, যা এই শিল্পের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অনুসারে পরিবেশবান্ধব শিল্পের গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশ যদি সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ করতে পারে, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে পাটপণ্য রপ্তানি থেকে দুই বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। তবে এর জন্য গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাটপণ্য ডিজাইন ও মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করা দরকার। বাংলাদেশে পাটের বাণিজ্যিকীকরণ, আধুনিকীকরণ এবং বিপণনের উন্নতি হলে এই শিল্প অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে।

পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের গুরুত্ব শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। পাট ১০০% জীবাণুবিয়োজ্য এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য, যা প্লাস্টিকের চেয়ে পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে কার্যকর।

বিশ্ব যখন প্লাস্টিকের বিকল্প খুঁজছে, তখন বাংলাদেশ তার ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্পকে নতুনভাবে বিশ্ববাজারে উপস্থাপন করতে পারে। সঠিক নীতিমালা, গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাটশিল্পকে আরও টেকসই ও লাভজনক করা সম্ভব। যদি এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বাংলাদেশ আবারও ‘সোনালি আঁশের দেশ’ হিসেবে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/জেএইচ

চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ”: উন্নয়ন না ঋণের ফাঁদ?

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে যখন “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” বা সংক্ষেপে BRI ঘোষণা

জুলাই সনদ ও গণভোট : গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপির সতর্ক অবস্থান

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও দুটি শব্দ কেন্দ্রবিন্দুতে—‘সংস্কার কমিশন’ এবং ‘গণভোট’। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি সংবিধান সংস্কারের

রাজনীতির অস্থিরতার ফাঁদে চট্টগ্রাম বন্দর!

ষাটোর্ধ মোহাম্মদ সেকান্দর। তাকে অপহরণ করার ঘটনায় আৎকে উঠি। সীতাকুণ্ডের পরিচিত মুখ সেকান্দর। বয়সে আমাদের

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় AEZ ভিত্তিক মিশ্র অনুজীব সার উদ্ভাবন

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের ধনী ও অতি মুনাফালোভী শিল্পোন্নত দেশগুলো দায়ী হলেও এর প্রভাবে সবচেয়ে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের প্রগতির টার্নিং পয়েন্ট: মির্জা ফখরুল

সাবেক পররাষ্ট্র ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মারা গেছেন

আবারও গণতন্ত্রকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল

আগামী বছর ভারত সফরের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বাউফলে দুই নেতাকে গ্রেপ্তার

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মারা গেছেন

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন: প্রেস সচিব

ইতিহাসের সবচেয়ে গরম বছরগুলোর একটি ২০২৫: জাতিসংঘ

আ.লীগের সুবিধাভোগীরা নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: প্রেস সচিব

ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: ইসি মাছউদ

ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হাজতি ঢামেকে মারা গেছেন

ঢাকার আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে আজ

বিএসএফ ক্যাম্পে ফেলে আসা স্বর্ণালংকারসহ ব্যাগ ফেরত পেলেন বাংলাদেশি দম্পতি

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

জকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো দল-গোষ্ঠীর চাপ নেই: উপাচার্য

মোটরসাইকেল শোডাউনে ফেনী ফিরলেন বিএনপি প্রার্থী ভিপি জয়নাল

গাজায় ত্রাণ আটকে দিচ্ছে ইসরায়েল, অভিযোগ জাতিসংঘের

মালদ্বীপে রিসোর্টের বর্জ্য তেল বিক্রির অভিযোগে পাঁচ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

৭ নভেম্বর বিপ্লবের মহানায়কে পরিণত হন জিয়াউর রহমান: ফখরুল

রেকর্ড শাটডাউনে অচল যুক্তরাষ্ট্র, বাতিল হয়েছে ফ্লাইট