ই-পেপার মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩২

ঢাকায় বায়ু দূষণের কারণ ও করণীয়

সাদিয়া সুলতানা রিমি
১২ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৮

ঢাকা শহর বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরীগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত উচ্চ হয়, যা নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। বায়ুদূষণের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।ভৌগোলিক কারণে প্রতি বছর শীতের সময় ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শীত শুরুর আগে থেকেই রাজধানীর বাতাসে দূষণের মাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়েছে এবং দূষণের দিক থেকে প্রায়ই প্রথম হচ্ছে। বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বায়ুর মান এতটাই খারাপ থাকে যে, এই পাঁচ মাসে সারা বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। গত আট বছরের চেয়ে গড়ে গত এক বছরে ১০ ভাগেরও বেশি বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটা বড় শঙ্কার বিষয়। বিশ্বের প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশদূষণের কারণে ঘটা মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে। আর রাজধানী ঢাকা তো অনেক বছর ধরেই বসবাসের অযোগ্য ও নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি।

এ বছরের নভেম্বর থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতি তিন দিনের মধ্যে যে কোনো এক দিন ঢাকা শহরের বায়ুর মানসূচক ৩৩০-এর ওপরে থাকছে। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে ঢাকা একাধিক বার ৩০০-এর বেশি একিউআই স্কোর নিয়ে সর্বোচ্চ দূষিত শহরের তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ থেকে ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থান সহজেই অনুমেয়।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস গ্রহণ এবং বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে অকালে মৃত্যুর শতকরা ৮৯ ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে হয়ে থাকে। প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ বায়ুদূষণ। পরিবেশগত কারণে ও গৃহস্থালিসংক্রান্ত কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর ৬৭ মিলিয়ন মানুষের অকালমৃত্যুর সঙ্গে জড়িত। এক গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে, যার মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। বিশুদ্ধ বাতাস সুস্থতার অত্যাবশ্যকীয় নিয়ামক। খাবার, পানি বা বাসস্থান ছাড়া আমরা কিছু সময় থাকতে পারলেও নিশ্বাস গ্রহণ ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারি না। তাই, বায়ুদূষণের প্রকৃতি এবং রোধের উপায় জানা খুবই প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও শিল্পঘন শহরগুলোতে মোট ১১টি সার্বক্ষণিক বায়ু মনিটরিং স্টেশনের (CAMS ) -এর মাধ্যমে বায়ুদূষণের উপাদানসমূহের (বস্তুকণা, ওজোন, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি) পরিমাণ নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

বায়ুর মান সূচকের রিপোর্ট করার জন্য ০-৫০ (ভালো), ৫১-১০০ (মাঝারি ভালো), ১০১-১৫০ (সাবধানতা), ১৫১-২০০ ( অস্বাস্থ্যকর), ২০১- ৩০০ (খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং ৩০১-৫০০০ ( তীব্র অস্বাস্থ্যকর) এই স্কেল ব্যবহার করা হয়। সাধারণত অছও-এর মাত্রা ২০০ অতিক্রম করলে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বেতার/টিভিতে প্রচার করা হয়ে থাকে।বর্ধিত জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, যানবাহন ও কলকারখানার পাশাপাশিঅপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম বায়ুদূষণের উৎস হিসেবে কাজ করে। মূলত বায়ুতে মাত্রাধিক সূক্ষ্ম বস্তুকণা বা পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM2.5 I PM10), কার্বন মনোক্সাইড (CO), কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO,), সালফার অক্সাইডসমূহ (SOX), নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ (NOX), ওজোন (O3) উপস্থিতি, বস্তুকণা; যেমন—নাইট্রেট, সালফেট, এমোনিয়া, কালো কার্বন, এন্ডোটক্সিন এবং সূক্ষ্ম ধাতব কণাগুলো; যেমন—লোহা, কপার, নিকেল, জিংক ইত্যাদি; ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC), ব্যাটারি, পেট্রোল, ডিজেল, হেয়ার ডাই থেকে নির্গত সিসা বায়ুদূষণের কারণ।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণসমূহ

ঢাকার আশেপাশে প্রায় ১,২০০টি ইটভাটা এবং কয়েক হাজার ছোট-বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। এই ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগই সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, যেখানে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ও কাঠ ব্যবহার করা হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে ছাই, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।নগরীতে চলমান বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে প্রায় ৩০% বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। নির্মাণ সামগ্রী যথাযথভাবে না ঢেকে রাখা এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সময় সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে ধুলাবালি বাতাসে মিশে যায়, যা বায়ুদূষণ বাড়ায়।এছাড়া ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বায়ুদূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ফিটনেসবিহীন ও পুরনো যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়, যা বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ বাড়ায়।নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিকল্পিত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা পোড়ানো হয়, যা বায়ুদূষণের আরেকটি প্রধান কারণ। এতে মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি

বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ফুসফুস ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ মারা যায়।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার: সিএনজি, ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়ানো।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ: ২০ বছরের বেশি পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা।

যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে যৌথ পরিবহন ব্যবস্থার প্রচলন।

নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা: নির্মাণস্থলে বালি, সিমেন্ট ইত্যাদি সামগ্রী ঢেকে রাখা এবং ধুলা কমাতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা।

নির্মাণ বিধি মেনে চলা: নির্মাণকাজের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ নিশ্চিত করা।

পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার: ইটভাটা ও শিল্প কারখানায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রয়োগ বাধ্যতামূলক করা।

নির্গমন নিয়ন্ত্রণ: শিল্প কারখানার নির্গমন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

সঠিক বর্জ্য নিষ্পত্তি: আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করে সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা।

পুনর্ব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ: বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বর্জ্য কমানো।

জনসচেতনতা কার্যক্রম: বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো।

কমিউনিটি উদ্যোগ: স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষায় কমিউনিটি উদ্যোগ গ্রহণ ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করা।

ঢাকার বায়ুদূষণ একটি জটিল সমস্যা, যা সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকার, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে পারি।

লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/জেএইচ

শিশু ও নারীর কল্যাণে সরকারের অবদান

সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণীতে উত্তরনের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে।আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন

আছিয়া: একটি নিষ্পাপ প্রাণের করুণ পরিণতি

আছিয়া ছিল এক নিষ্পাপ কিশোরী, যার স্বপ্ন ছিল শিক্ষিত হয়ে সমাজে কিছু অবদান রাখবে। কিন্তু

স্মরণ: প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

শিক্ষকের স্থান সবচেয়ে উচ্চে, কারণ শিক্ষক শুধু পাঠদান করেন না, শিক্ষার্থীর মানস গঠনের কারিগরও হয়ে

বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকারের করণীয়

বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক অশান্তির এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ

দ্রুত ১০ম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা ও নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের দাবি

এক এগারোর মতো বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে

জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

শুধু শিশু ধর্ষণের বিচারে হচ্ছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল: আইন উপদেষ্টা

নিহত মন্টু দাশের বাড়িতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মনি

দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ ড. ইউনূসের

দুই আন্দোলনের মধ্যে উপদেষ্টারা বিভাজনরেখা তৈরি করছেন: রিজভী

চুয়াডাঙ্গায় গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণচেষ্টা, যুবককে গনধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ

জুলাই আন্দোলনে হামলায় জড়িত ঢাবির ১২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত না করার ‘কঠিন’ নিশ্চয়তা চায় রাশিয়া

দেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে: জিএম কাদের

পিরোজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ প্রস্তাবে লিখিত মতামত দিয়েছে এটি পার্টি

বেক্সিমকো ফার্মার ২২ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু

এবার বরগুনার সেই হিন্দু পরিবারের দায়িত্ব নিলো জামায়াত

বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের উদ্বেগের কথা বললেন তুলসি গ্যাবার্ড

হত্যা মামলার আসামি আক্তারুজ্জামান হাসপাতালের বিলাসবহুল কেবিনে

আমরা বলছি ডিসেম্বরে নির্বাচন, এর মধ্যেই সংস্কার করতে হবে

বিশ্বব‍্যাপী বাংলাদেশের বদনাম ছড়াচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা