ই-পেপার বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ঋণ সংকট ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা

নুসরাত জাহান আনিকা:
১৩ মার্চ ২০২৫, ১১:১২

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ঋণ সংকট ব্যাপকভাবে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপে নাজেহাল, এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। চলমান বৈশ্বিক মন্দা, ডলার সংকট ও ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কঠোর পরীক্ষার মুখোমুখি। এ পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব

২০২৪ সালের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছিল যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো ঋণখেলাপির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচশ ৬৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট জিডিপির প্রায় ৩৬.৪৩%। যদিও সরকার বলছে যে এই ঋণের পরিমাণ এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, তবে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ও সুদের হার নিয়ে যথেষ্ট চাপ বিদ্যমান।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে আইএমএফ-এর প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যক্রম ও বৈদেশিক ঋণের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া, বিশ্ববাজারে মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট এবং খাদ্য ঘাটতির মতো সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা, কৃষি ও শিল্প খাতকে আরও শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা জরুরি। পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি খাতে দক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভিত শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রভাব

বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। বড় প্রকল্পগুলোর জন্য বিদেশি ঋণ গ্রহণ যেমন একদিকে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সাহায্য করেছে, অন্যদিকে ঋণের বোঝা বাড়িয়ে তুলেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা, অন্যান্য দেশের সাথে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্ক, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব, আমদানি-রপ্তানির আনুপাতিক হার—এই সংকটকে আরও গভীর করছে। পাশাপাশি, সরকারি নীতিগুলোর ধারাবাহিকতা ও বাস্তবায়নযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে করণীয়

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত রাখতে হলে সুপরিকল্পিত ঋণ ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ নীতি বাস্তবায়ন, সরকারি ব্যয়ের ভারসাম্য রাখা জরুরি। এছাড়া, টেকসই শিল্প উন্নয়ন, রপ্তানিমুখী উৎপাদন বৃদ্ধি, এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও জোরদার করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করা সম্ভব। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে বিনিয়োগ বাড়ানো হলে দেশীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশি নির্ভরতা কমবে।

সুপারিশসমূহ:

বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

আয়ের নতুন উৎস সৃষ্টি ও রপ্তানি বহুমুখীকরণ।

স্থানীয় শিল্প বিকাশে বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ঋণ সুবিধা প্রদান।

সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নীতি গ্রহণ।

সরকারি ব্যয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দমন।

কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ ও ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করা।

আন্তর্জাতিক ঋণ সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করাই হবে সময়ের দাবী। বাংলাদেশের জন্য একটি সুসংহত অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা এখন অত্যন্ত জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা যায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/জেএইচ

ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (IP) ও উদ্ভাবনী অর্থনীতি: বাংলাদেশের পরবর্তী চালিকাশক্তি

আজকের বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি আর কেবল সস্তা শ্রম বা কাঁচামাল

রাজনীতি-অর্থনীতির দুর্গতি কাটাতে নির্বাচন ছাড়া গতি নেই

বহুল আলোচিত গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড.

মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও রোহিঙ্গা ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

মিয়ানমারে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট এখন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চলমান নানা

বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান

বর্তমান বিশ্ব এক জটিল, দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং মেরুকৃত ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮ জন

বিএসটিআইয়ের সব সেবা এখন পাওয়া যাবে অনলাইনে

মিয়ানমারে অনলাইন প্রতারণা চক্র গ্রেপ্তার

জকসু নির্বাচন: ৯ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ উন্মুক্ত লাইব্রেরি

তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসা জন্য বন্ধ ঘোষণা

পটুয়াখালীর গলাচিপায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে ইসির সংলাপে এনসিপির আপত্তি

নারীদের পেছনে রেখে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না: ধর্ম উপদেষ্টা

বান্দরবানে বন্যহাতির আক্রমণে শ্রমিকের মৃত্যু

নওগাঁর রাণীনগরে গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে আগুন

‘শুটার জনি’র সঙ্গে ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি হয় কিবরিয়া হত্যার: র‌্যাব

নভেম্বরের ১৮ দিনে রেমিট্যান্সে এলো ১৯০ কোটি ডলার

ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো থেকে মুশফিকের ১ রানের অপেক্ষা

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাঁক সোজা করার দাবিতে মানববন্ধন

হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে রোনালদোর প্রশংসা করে যা বললেন ট্রাম্প

গণতন্ত্র ছাড়া দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, সতর্ক করলেন মির্জা ফখরুল

কুয়েতে গৃহকর্মী নিয়োগের নামে মানব পাচারের অভিযোগ

নির্বাচনের শঙ্কা দূর করতে সরকার ও কমিশনকেই দায়িত্ব নিতে হবে

মালয়ে‌শিয়ায় কর্মী পাঠাতে ১০ শর্ত, কয়েকটিতে সরকারের শক্ত আপত্তি

খেলাপি ঋণ অবলোপন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত