ই-পেপার সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩২

স্মরণ: প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

বিল্লাল বিন কাশেম
১৪ মার্চ ২০২৫, ১৫:০১

শিক্ষকের স্থান সবচেয়ে উচ্চে, কারণ শিক্ষক শুধু পাঠদান করেন না, শিক্ষার্থীর মানস গঠনের কারিগরও হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ এমন থাকেন, যাঁরা শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্কের সীমানা অতিক্রম করে এক অভিভাবক হয়ে ওঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, সাবেক উপাচার্য, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যার তেমনই একজন ছিলেন।

১৩ই মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত কয়েকদিন শুধু দোয়া করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। আজও ভাবতে পারছি না, তিনি আর নেই। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মম—একজন মানুষ শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার কর্ম, আদর্শ, শিক্ষা ও স্মৃতি রয়ে যায় আমাদের হৃদয়ে, প্রতিটি মুহূর্তে।

শিক্ষক হিসেবে অনন্য ছিলেন তিনি

আরেফিন স্যার ছিলেন এমন একজন শিক্ষক, যাঁর ক্লাস করার ধরনই ছিল অনন্য। তাঁর লেকচার এতটাই গুছানো, পরিপূর্ণ ও প্রাণবন্ত ছিল যে, আলাদা করে বই বা নোট পড়ার প্রয়োজন হতো না। তিনি পাঠদান করতেন বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে, উদাহরণ দিতেন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু বিষয়বস্তু শিখত না, বরং তা হৃদয়ে ধারণ করত।

আমার শিক্ষকতা জীবনের শুরু ফাস্ট ইয়ার থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত তার সান্নিধ্যে কাটানো সময়গুলো এক শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তিনি শুধু একাডেমিক জ্ঞানের শিক্ষা দেননি, দিয়েছেন বাস্তব জীবনে সৎ ও সাহসী থাকার দীক্ষা।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ি, তখন থেকেই আরেফিন স্যারের সঙ্গে আমার সরাসরি যোগাযোগ। ক্লাসে তিনি শুধু পড়াতেন না, বরং শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতেন ভাবতে, প্রশ্ন তুলতে। তিনি বিশ্বাস করতেন, সাংবাদিকতা শুধু পঠনপাঠনের বিষয় নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

আমার সাংবাদিকতা জীবনের এক যুগেরও বেশি সময় জুড়ে আমি স্যারের শিক্ষা কাজে লাগিয়েছি। যদিও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ কমে গিয়েছিল, কিন্তু স্মরণ করা কখনো কমেনি।

স্মৃতির পাতায় এখনও ভাসে, যখন স্যার ক্লাস নিতেন, তখন তাঁর কথা, তাঁর অভিব্যক্তি, তাঁর শেখানোর ধরন আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। আজও স্যারের লেকচারগুলো মনে আছে। তাঁর শিক্ষা ছিল এমন যে, তা আজও পথ দেখায়।

একজন গুণী ও কৃতিমান ব্যক্তিত্ব

আরেফিন স্যারের জীবন এক সফলতার গল্প। তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ, এবং সর্বোপরি একজন সৎ, আদর্শবান মানুষ।

তার কর্মজীবন শুরু হয় বুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে। কিন্তু তাঁর প্রতিভা, নিষ্ঠা ও জ্ঞানের গভীরতা তাঁকে শুধু একজন কর্মকর্তা নয়, বরং দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে যোগ দেওয়ার পর তিনি হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীদের আইকন। তাঁর গবেষণা, তাঁর লেখনী, তাঁর বক্তব্য—সবকিছুই ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য দিকনির্দেশনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ভূমিকা

যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রশাসনিক জটিলতা, ছাত্র রাজনীতি, একাডেমিক উন্নয়ন—সবকিছুর সমন্বয় করতে হয়েছে তাঁকে।

তার সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটে, ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। একজন প্রশাসক হিসেবে তাঁর কঠোরতা যেমন ছিল, তেমনি ছিল শিক্ষার্থীদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।

একজন ভিসি হিসেবে তাঁর শত সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু তাঁর সময়কালে অনেক দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে—এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল, ভিসি হওয়া সত্ত্বেও তিনি ক্লাস নেওয়া বন্ধ করেননি। কারণ শিক্ষকতা ছিল তাঁর সবচেয়ে পছন্দের বিষয়।

একজন সহজে কাছে যাওয়া মানুষ

আমরা অনেক সময় দেখি, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কাছে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আরেফিন স্যার ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন সহজ-সরল, সবার কথা শুনতেন, সবার জন্য সময় দিতেন। শিক্ষার্থীরা যখন-তখন তাঁর অফিসে যেতে পারত, নিজের সমস্যার কথা বলতে পারত।

এমন মানুষ সত্যিই বিরল, যিনি দায়িত্বের উচ্চতায় থেকেও সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছে সহজে পৌঁছাতে পারেন।

স্মৃতির পাতায় অমলিন

আমার জীবনে তাঁর সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। সেই প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত, তাঁর প্রতিটি উপদেশ, প্রতিটি কথোপকথন আমার মনে গেঁথে আছে।

স্মরণ করছি সেই মুহূর্তগুলো, যখন তিনি আমাদের ক্লাসে সত্যিকার অর্থে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। কখনো আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব, এটি সমাজের দর্পণ।

শেষ দেখা এবং শেষ বিদায়

আমার শেষ দেখা হয়েছিল স্যারের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে। কথা হয়েছিল, আবার দেখা হবে। কিন্তু সেই দেখা আর হলো না। আজ যখন তিনি নেই, তখন শুধু স্মৃতিগুলোই অবলম্বন।

স্যার নিশ্চয়ই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্বস্তি আর দুঃখ নিয়েই বিদায় নিয়েছেন। তিনি আরও কিছুদিন আমাদের মাঝে থাকলে হয়তো আরও নতুন কিছু দেখতে পারতেন, আরও নতুন কিছু গড়ে দিতে পারতেন।

একজন মহীরুহ শিক্ষক

বড় হতে গেলে শুধু উচ্চতা অর্জন করলেই হয় না, প্রয়োজন সহনশীলতা, পরিশ্রম, ধৈর্য, ও সত্যের পথে অবিচল থাকা। আরেফিন স্যার ছিলেন সেই মহীরুহ, যাঁর ছায়া শিক্ষার্থীদের মনে চিরকাল থাকবে।

রাজনীতি মানুষকে বিভক্ত করতে পারে, কিন্তু শিক্ষকতা এমন একটি জায়গা, যেখানে ভালো-মন্দ, মতাদর্শ ভুলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গঠনের কাজ করতে হয়। আরেফিন স্যার এই কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন।

শেষ প্রার্থনা

আমরা শুধু দোয়া করতে পারি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। তাঁর ভালো কাজগুলো কবুল করুন, তাঁর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করুন।

তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর শিক্ষা, তাঁর আদর্শ, তাঁর অবদান চিরকাল আমাদের মনে থাকবে। একজন শিক্ষক হিসেবে, একজন অভিভাবক হিসেবে, একজন প্রশাসক হিসেবে তিনি অনন্য ছিলেন এবং থাকবেন।

স্যার, আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, আমাদের চিন্তায়, আমাদের কর্মে। আল্লাহ আপনাকে শান্তিতে রাখুন। আমিন।

লেখক: লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী

আমার বার্তা/জেএইচ

শিশু ও নারীর কল্যাণে সরকারের অবদান

সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণীতে উত্তরনের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে।আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন

আছিয়া: একটি নিষ্পাপ প্রাণের করুণ পরিণতি

আছিয়া ছিল এক নিষ্পাপ কিশোরী, যার স্বপ্ন ছিল শিক্ষিত হয়ে সমাজে কিছু অবদান রাখবে। কিন্তু

বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকারের করণীয়

বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক অশান্তির এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ঋণ সংকট ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ঋণ সংকট ব্যাপকভাবে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট, ওআইসি প্রতিনিধিদের সহায়তা চাইল ইসি

শিগগির তুলাকে কৃষি পণ্য ঘোষণা করা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

দেশে এসে উচ্ছ্বসিত হামজা চৌধুরী, ভারতকে হারানোর আশাবাদ

নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুলিশকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে

পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর বহরে হামলা-গোলাবর্ষণ, নিহত ৫

সরকার পতনের আরেক নীলনকশা ফাঁস করলেন পিনাকী

এবার ডিআইজি মোল্যা নজরুল ও এসপি মান্নান বরখাস্ত

শ্রমিক অসন্তোষ : গাজীপুরে ১২ কারখানায় ছুটি ঘোষণা

ডিএমটিসিএল কর্মীদের মারধরের ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিতে প্রক্সি ছাড়া বিকল্প নেই: ইসি সানাউল্লাহ

সড়কে ডাকাতি-ছিনতাই রোধে জরুরি পদক্ষেপ চায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি

৭ বছরের শিশু ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন

স্ত্রীসহ বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেন ওরিয়ন গ্রুপ চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম

সিআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন ডিআইজি গাজী জসীম

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মাত্রা, নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভারত

বিএনপি-জামায়াত-আ.লীগের গোপন সমঝোতা প্রকাশ সাবেক সেনাপ্রধানের

যে কারণে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদলেন শাজাহান খান

চীনের উত্থানে ভারতের নেতা হওয়ার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

‘ধর্ষণ’ নিয়ে মন্তব্য: ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ