ই-পেপার সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩২

ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা সংকটে আমরা কতটা নিরাপদ

নিশাত অর্নি:
২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৮

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কয়েক সেকেন্ডেই আমরা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তথ্য পাঠাতে পারি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে মুহূর্তেই যুক্ত হতে পারি সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে। কিন্তু প্রযুক্তির এই আশীর্বাদের আড়ালে রয়েছে এক বড় বিপদ—ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংকট। প্রশ্ন হলো, আমরা আসলে কতটা নিরাপদ?

ইন্টারনেটের যুগে তথ্যই হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমরা যখন কোনো অ্যাপ ব্যবহার করি, অনলাইন কেনাকাটা করি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট করি, তখন আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়। এসব তথ্য ব্যবহার করে আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, দৈনন্দিন অভ্যাস এমনকি রাজনৈতিক চিন্তাধারাও নির্ধারণ করা সম্ভব। অনেক সময় আমাদের অনুমতি ছাড়াই এসব তথ্য বিক্রি হয়ে যায় বিভিন্ন কোম্পানির কাছে, যারা পরে তা ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন, মার্কেটিং বা আরও নানা উদ্দেশ্য।

আমরা প্রতিদিন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, এসব অ্যাপে যে তথ্য শেয়ার করছি, তা আসলে কতটা নিরাপদ? সাম্প্রতিক বিভিন্ন তথ্য ফাঁসের ঘটনায় দেখা গেছে, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত বার্তা, অবস্থান তথ্য, এমনকি ফোন নম্বরও তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে যাচ্ছে। এতে করে সাইবার অপরাধীরা সহজেই আমাদের তথ্য ব্যবহার করে প্রতারণা করতে পারে।

ডিজিটাল প্রতারণা, ব্যাংকিং জালিয়াতি, পরিচয় চুরি, হ্যাকিং—এসব শব্দ এখন আর অপরিচিত নয়। প্রায়ই শোনা যায়, কেউ একজন ফোনে কৌশলে ব্যাংকের তথ্য জেনে নিয়ে তার একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়েছে, কিংবা কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করা হয়েছে। এগুলো শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, বরং সামাজিকভাবে একজন মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংকট আরও বেড়েছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আমাদের ব্রাউজিং তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের আচরণ সম্পর্কে ধারণা নেয় এবং আমাদের ইচ্ছার বাইরে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ও কনটেন্ট দেখায়। AI প্রযুক্তির এই দিকটি অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কীভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়?

আমরা নিজেরাই যদি কিছু বিষয়ে সচেতন হই, তাহলে আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিজিটাল যুগ আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি গোপনীয়তার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। তবে সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা নিজেদের তথ্যকে নিরাপদ রাখতে পারি। প্রযুক্তিকে আমাদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা উচিত, তবে অসতর্কতার কারণে যেন সেটি আমাদের বিপদের কারণ না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেমন:-

  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। জন্মতারিখ, ঠিকানা, ফোন নম্বর, পারিবারিক তথ্য ইত্যাদি অনলাইনে শেয়ার করার আগে ভেবে শেয়ার করা উচিত, এসব তথ্য অন্যের হাতে গেলে কী হতে পারে।
  • সহজ অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে জটিল ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। একই পাসওয়ার্ড একাধিক প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার না করাই ভালো। দুই ধাপ বিশিষ্ট প্রমাণীকরণ (Two-Factor Authentication) চালু করলে নিরাপত্তা আরও বাড়বে।
  • অনেক সময় ফিশিং (Phishing) আক্রমণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। অচেনা ইমেইল, মেসেজ বা লিংকে ক্লিক করার আগে যাচাই করে নেওয়া ভালো।ব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থার নামে প্রেরিত সন্দেহজনক ইমেইল থেকে সাবধান থাকা উচিত।
  • VPN ও নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা উচিত। উন্মুক্ত বা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার এবং প্রয়োজনে VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার করলে নিজের অবস্থান ও ব্রাউজিং তথ্য গোপন থাকবে।
  • অনেক সময় পুরোনো সফটওয়্যারে নিরাপত্তা দুর্বলতা থাকে, যা হ্যাকাররা কাজে লাগাতে পারে। তাই মোবাইল, কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসের সফটওয়্যার ও অ্যাপ নিয়মিত আপডেট করুন।
  • প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। নিজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদেরও ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করুন। বিশেষ করে বাচ্চা বা প্রবীণ ব্যক্তিরা অনলাইনে প্রতারণার শিকার হতে পারেন, তাই তাদেরও সতর্ক করতে হবে।

ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা রক্ষা করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হলে আমাদের অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক সচেতনতা ও সাবধানতার মাধ্যমে আমরা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারি এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ থাকতে পারি। মনে রাখতে হবে, আমাদের অনলাইন কার্যক্রম যত সচেতনভাবে পরিচালিত হবে, ততই আমরা সাইবার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে পারব।

লেখক : শিক্ষর্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/নিশাত অর্নি/সিআর/এমই

এনসিপি : পরিবর্তনের আশা, সন্দেহ এবং চ্যালেঞ্জ

বছরখানেক আগেও কি আমরা ভেবেছিল বাংলাদেশের রাজনীতির পুরনো মঞ্চে একদল তরুণ ঝড় তুলবে?জুলাই অভ্যুত্থানের পরে, 

সময়ের সাথে সাথে বদলেছে ঈদ সংস্কৃতি

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর এই দিনটি আসে এক

বৃদ্ধাশ্রমের ঈদ : এক মলিন উৎসবের গল্প

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসবের রঙ, নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, প্রিয়জনদের সান্নিধ্য, আর অফুরন্ত

ভূমিকম্পের হুমকিতে বাংলাদেশ

একটি প্রচণ্ড ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন পুরো পৃথিবী যেন কাঁপতে থাকে, যেন ধ্বংসের সাইরেন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টাইম ট্রাভেল করাবে গুগল ম্যাপ! নতুন ফিচার নিয়ে কৌতূহল

কারাগারে দাপুটে আওয়ামী লীগ নেতাদের মলিন ঈদ

আনন্দে ভেসে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনে পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর

১৫ বছর পর মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি: মির্জা ফখরুল

বিদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজকীয় ঈদ, দেশে বিপাকে কর্মীরা

নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হবে: বিএনপি

এনসিপি : পরিবর্তনের আশা, সন্দেহ এবং চ্যালেঞ্জ

আগামীতে আরও বড় পরিসরে ঈদ উৎসবের আয়োজন করা হবে

৭ বছর পর মায়ের সাথে ঈদ উদযাপন করলেন তারেক রহমান

মোঘল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু

ঈদের দিন গাজায় ৬৪ জনকে হত্যা করলো ইসরায়েল

জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূসের

বিশেষ মোনাজাতে দেশ-জাতির কল্যাণ ও ফিলিস্তিনে শান্তি কামনা

জুলাই-আগস্টে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার হতেই হবে

চট্টগ্রামে ঈদের সকালে বাস-মিনিবাস সংঘর্ষে নিহত ৫

জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত

বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত

৩১ মার্চ ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

ঈদের ছুটিতে দুদিনে ঢাকা ছাড়লেন প্রায় ৪১ লাখ সিমধারী