ই-পেপার বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অর্থবছর পরিবর্তন করতে হবে

কাজী সামাদ
০২ জুন ২০২৫, ১৭:২৩

প্রথমে বলতে চাই- অর্থবছর পরিবর্তন করতে হবে। আমরা জানি, ব্রিটিশ আমল থেকে অর্থবছর জুলাই-জুন হিসেবেই আছে। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়াসহ হাতে গোনা কয়েকটা দেশ এখনো অর্থবছর হিসেবে জুলাই-জুন ব্যবহার করে। বাকি সবাই তাদের নিজ দেশের পরিস্থিতি, কিংবা নিজ দেশের প্রয়োজন বা আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে এটা পরিবর্তন করে। সেই হিসেবে কোথাও কোথাও জানুয়ারি-ডিসেম্বর, কোথাও কোথাও এপ্রিল-মার্চ, আবার কোথাও কোথাও মার্চ-ফেব্রুয়ারি আছে। বাংলাদেশে হতে পারে বাংলা বছর বৈশাখ-চৈত্র, ১৪ এপ্রিল-১৩ এপ্রিল অথবা হতে পারে জানুয়ারি-ডিসেম্বর। জুলাই-জুন অর্থবছরের বড় সমস্যা হলো আগের বছর যখন শেষ হয় তখন প্রচুর ঝড়বৃষ্টি থাকে। সে সময় দুর্নীতি-অনিয়মের সুযোগ বেড়ে যায়। অর্থের অপচয় হয় এবং কাজগুলো ঠিকমতো শেষও করা যায় না। সেই কারণে এটা মনে হয় পরিবর্তন হচ্ছে না। এ সরকার দায়িত্ব নিতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সরকারের বড় দায়িত্ব হচ্ছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উদ্যোগ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের গতিপথ তৈরি করা। আমরা জানি এ সরকার অন্তর্বর্তী সরকার, এ সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না। ফলে, তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু উদ্যোগ সরকার সহজেই নিতে পারে। যেমন- শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত। এই দুই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি একটা বহু বছরের দাবি। অথচ এখনো সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ একেবারে নিচের দিকে। যেখানে হওয়ার কথা জিডিপির ৫-৬ শতাংশ সেখানে আছে ১-২ ভাগ। অর্থাৎ যথাযথ উদ্যোগ নিলে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়বে কয়েক গুণ। বর্তমানে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ খুব কম আবার তার মধ্যেও প্রচুর দুর্নীতি এবং অনিয়ম হয়।

অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল বিদেশ সফর, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আছে। এগুলো বাদ দিতে হবে, স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রত্যেকটা বাজেট, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তার বরাদ্দ বিস্তারিত ওয়েবসাইটে থাকতে হবে। মানুষ দেখবে- কোনটা আসল, কোনটা অপচয় বা দুর্নীতি। একটা উদাহরণ দিই- না চাইলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দ এল ১৫০০ কোটি টাকা। পেছনে পেছনে হাজির হলো কিছু ঠিকাদার, স্থপতি, চাঁদাবাজ। একের পর এক ভবন নির্মাণ শুরু হয়ে গেল, অপরিকল্পিত যথেচ্ছাচার। ঠিকাদাররাই সব ঠিক করছে তখন।

আমরা মাস্টার প্ল্যান করার কথা বলছি কিন্তু ওপর থেকে আশীর্বাদ পাওয়া প্রশাসন কোনোকিছুই কানে তুলছে না। পুরো ক্যাম্পাসের বড় ক্ষতি হলো। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই রকমভাবে অপচয় ও দুর্নীতির উৎসব চলেছে। এ ধরনের বরাদ্দ থেকে বাজেটে দেখাবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ল! চিকিৎসা খাতেও এরকম অনেক কেনাকাটা হচ্ছে। মেশিনপত্র পড়ে আছে, ব্যবহার নেই। দামি যন্ত্র কেনা হয়েছে, লোক নিয়োগ করা হয়নি। ভবন নির্মাণ হয়েছে, হাসপাতাল ভবন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এগুলোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে।

পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটা সংস্কার খুব সহজ ছিল এ সরকারের জন্য। তা হচ্ছে- এটা ঘোষণা করা যে- প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সব উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী, রিপ্রেজেনটেটিভ, সরকারি আমলা, সবাই তাদের চিকিৎসা বাংলাদেশের পাবলিক হাসপাতালে গ্রহণ করবেন। এটা করলে পাবলিক হাসপাতালে জাদুর বাক্সের মতো পরিবর্তন হয়ে যেত। এবং সেই সঙ্গে যদি তারা সিদ্ধান্ত জানাতেন যে, তাদের সন্তানরা বাংলাদেশের পাবলিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তাহলে দেখতে পেতেন এগুলোর চেহারাও পরিবর্তন হয়ে যেত। এ সূচনাটা তারা সহজেই করতে পারতেন। কিন্তু এর কোনো লক্ষণ নয় মাসেও আমরা দেখতে পাইনি। বাজেটের আগে এ ধরনের ঘোষণা হলে বরাদ্দের যে গুণগত দিক, তারও একটা পরিবর্তন হওয়া খুবই সহজ হতো।

আরেকটা কাজ হচ্ছে- জাতীয় সক্ষমতা। জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রশিক্ষণ, গবেষণা। জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে একটা দেশ যদি অগ্রসর না হয় তাহলে কোনো টেকসই পরিবর্তন হয় না। স্যাটেলাইট কিনে গত সরকার বাহাদুরি করল। এর জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়, এসব বাহাদুরি দেখিয়ে দেশ কখনো অগ্রসর হতে পারে না। এর বদলে এর একাংশ টাকা তারা যদি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিজ্ঞানী, গবেষকদের গবেষণা করতে দিত তাহলে বিজ্ঞান গবেষণার একটা স্থায়ী ভিত্তি তৈরি হতে পারত। সেই জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টাই গুরুত্বপূর্ণ।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টা এমনভাবে ঘোষণা করলেন যে, এটা দিতেই হবে। যেকোনো মূল্যে দিতে হবে। কিংবা করিডর তৈরি করতে হবে। স্টার লিংকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এসবই জাতীয় সক্ষমতার বিকল্প হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। এখানে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রে সরকারের কী করণীয় ছিল, কী করতে পারত? বিদেশি কোম্পানি আনতেই হবে- এরকম দৃঢ়তা না দেখিয়ে তারা যদি দৃঢ়তা দেখাতেন চট্টগ্রাম

বন্দরে যেসব দুর্বলতা আছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব আছে, এগুলো দূর করার জন্য জাতীয় দক্ষতা বাড়ানো। প্রয়োজনে যদি দরকার হয় প্রশিক্ষণে পাঠানো বা প্রশিক্ষক নিয়ে আসা- এগুলো করতে পারতেন।

আমাদের দরকার গ্যাস উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। সেটার জন্য গত ৯ মাসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সামনে বাজেটে এ বিষয়গুলো থাকতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিগত অবস্থানের একটা পরিবর্তন করতে হবে। শতভাগ মালিকানায় দেশের সম্পদ দেশেই ব্যবহার সম্ভব হলে নিরাপত্তা থাকবে, সুলভে গ্যাস পাওয়া যাবে, সুলভে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারব। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যে বিশাল ভর্তুকি দেখা যাচ্ছে, তা একেবারে কমে আসবে যদি নিজেদের জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করি। সরকারের একটা সুযোগ ছিল এ কাজগুলো করে পরিবর্তন দৃশ্যমান করার।

আমরা আগের সরকারগুলোর সময় দেখেছি যে, রেলওয়ের সৈয়দপুর, চট্টগ্রামে যেসব ওয়ার্কশপ ছিল তার জনবল কমানো হয়েছে, বহু বছরে তৈরি দক্ষ জনশক্তিকে বেকার বানানো হয়েছে। ইঞ্জিন, ওয়াগন, বগি সবকিছু আমদানি করা হচ্ছে। অথচ ওয়ার্কশপ যদি শক্তিশালী করা হতো তাহলে বাংলাদেশেই রেলের বগি, ইঞ্জিন নির্মাণ করা সম্ভব হতো। রেলওয়ে-নির্ভর একটা যোগাযোগব্যবস্থা যদি আরও বিস্তৃত হতো তাহলে অনেক অপচয়, পরিবেশদূষণ, দুর্ঘটনা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারতাম।

প্রধান উপদেষ্টার মুখে আমরা থ্রি-জিরোর কথা শুনি। তার থ্রি-জিরোর মধ্যে একটা হলো কার্বন কমানো। কিন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই যাচ্ছে। দ্বিতীয় হলো বেকারত্ব শূন্য করা। গত নয় মাসে নতুন বেকার হয়েছে লাখেরও বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। তৃতীয় হলো শূন্য দারিদ্র্য, গত ৯ মাসে ২০ লাখের বেশি দারিদ্র্য বেড়েছে। তার মানে আমরা কথা শুনছি একরকম, কাজ দেখছি আরেক রকম।

সর্বশেষ বলতে চাই, সরকারের কাজ ছিল বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ নির্মাণের গতিমুখ ঠিক করা। এ সরকার অস্থায়ী সরকার, এর স্থায়ী কোনো ম্যান্ডেট নেই। সুতরাং তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট হয়েছে, কিছু সংস্কারের প্রত্যাশা রয়েছে এবং কিছু করণীয় আছে, যেগুলো তারা খুব সহজেই শুরু করতে পারতেন, যাতে জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে দেশ অগ্রসর হতে পারে।

লেখক: শিক্ষাবিদ

আমার বার্তা/এল/এমই

এফবিসিসিআইয়ের সংস্কার উত্তর  নির্বাচন ও কিছু কথা

গত ২০ মে ২০২৫  তারিখে ব‍্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান গণ অভ‍্যুত্থানের মাধ‍্যমে গঠিত সরকার

এনটিআরসিএ’র নিয়োগ বঞ্চিত ১-১২ তম ব্যাচের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতার দ্রুত সামাধান চাই

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত

নিরাপত্তাহীনতার নাগপাশে বন্দি বাংলাদেশ

ঘরে-বাইরে এক অদ্ভুত আতঙ্ক। জনতার চোখে বিস্ময় নয়, ভয়। বৃদ্ধের কাঁপা ঠোঁটে আস্থার কথা নেই,

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস

বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি প্রধান উন্নয়নশীল মিশ্র অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আব্দুল্লাহপুরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে জড়িত গ্রেফতার ২

শিবপুরে বাজারে ইজারা নিয়ে গরুর হাট বসালেন স্কুল মাঠে

রাজারহাটে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কিশোরীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ

খিলক্ষেতে সেনাবাহিনী-বিআরটিএ যৌথ চেকপোস্ট

সিংগাইরে জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত পালিত

পবিত্র ‘ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা’ ঈদ মোবারক

খাল ও নালার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে

বাজেট ব্যবসাবান্ধব নয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে: বিসিআই

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী

বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে: জি এম কাদের

শপথ দাবিতে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা ইশরাকের

‌‘পুশ ইন’ বন্ধে দিল্লিকে ফের চিঠি দেবে ঢাকা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা জবাব দেন না, মিষ্টি হাসি দিয়ে বিদায় করে দেন: মান্না

লিচুর খেতে গিয়ে গলায় বিচি আটকে গেলে যা করবেন

পর্যাপ্ত গরু আছে, পার্শ্ববর্তী দেশের প্রয়োজন নেই: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

এবারের বাজেট অসংগতি ও অপচয় কমানোর বাজেট: জ্বালানি উপদেষ্টা

নার্স ও কেয়ারগিভার জন্য সুখবর থাকছে এবারের বাজেটে

বেবিচক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌদি অ্যাম্বাসির চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এর সৌজন্য সাক্ষাৎ

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনীতে একমত বেশিরভাগ দল