রমজান মাসের শেষ দশকের অন্ধকারে যখন পৃথিবী নিঃশব্দে শান্ত, ঠিক তখনই আল্লাহর রহমতের একটি অমূল্য রূপ আবির্ভূত হয়। লাইলাতুল কদর, বা সবে কদর, সেই রাত যার সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে উল্লিখিত রয়েছে অগণিত ফজিলত ও মর্যাদা। এটি এমন একটি রাত, যা সারা বছরের সমস্ত রাতের তুলনায় অত্যন্ত বরকতময় এবং শান্তিপূর্ণ। এই রাতে সৃষ্টির সেরা মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা আজ জানব, কেন এই রাতটি আমাদের জীবনের জন্য একটি অমূল্য উপহার।
কুরআনের সুরে লাইলাতুল কদরের মহিমা
পবিত্র কুরআনের সুরা আল-কদরে আল্লাহ তাআলা নিজেই এই রাতের মহিমা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন: “নিশ্চয়ই আমরা কুরআনকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি, এবং আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সুরা আল-কদর, 97:1-3)
এখানে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এই রাতটি এমন এক রাত, যা হাজার মাসের থেকেও অধিক সম্মানিত এবং উত্তম। যখন পৃথিবী নিঝুম, যখন আকাশের ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে, সেই সময়ে মানব হৃদয় এক বিশেষ শান্তি ও নূর পায়। কুরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এই রাতটি এমন এক রাত, যেখানে সমস্ত সৃষ্টির কাজ পরিচালিত হয় আল্লাহর ইচ্ছায় এবং বান্দার জন্য সেই কাজ হয় কল্যাণকর।
হাদিসের বাণীতে সবে কদরের গুরুত্ব
হাদিসেও এই রাতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবী (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশা করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিসে নবী (সাঃ) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি এই পবিত্র রাতে সঠিকভাবে ইবাদত করবে, তার সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। এটি আমাদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ, যা অনাবিল শান্তি ও মাগফিরাতের পথ উন্মোচন করে দেয়। লাইলাতুল কদর আমাদের সেই মহাসময় এনে দেয়, যেখানে আল্লাহ আমাদের সব ত্রুটি মাফ করে দেন, এবং আমরা নতুনভাবে জীবন শুরু করতে পারি।
শান্তির স্নিগ্ধ সন্ধ্যা : আল্লাহর রহমতের ছায়া
লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত, যেখানে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের গোনাহ মাফ করে দেন এবং রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। ইসলামিক বিশ্বাসে এই রাতটি মানুষের তওবা করার এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করার এক অনন্য সুযোগ। যারা এই রাতে সৎভাবে ইবাদত করেন, আল্লাহ তাদের সকল গোনাহ মাফ করে দেন এবং তাদের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
অপরিসীম বরকত : হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত
কুরআনে যে বলা হয়েছে, "লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম", তা এই রাতের অতুলনীয় মর্যাদাকে তুলে ধরে। এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব এনে দেয়। এ রাতের বিশেষত্ব হলো, এখানে এক মুহূর্তের ইবাদতই এত সওয়াব ও বরকত প্রদান করে, যা অন্য কোনো সময়ে সম্ভব নয়। এটি এমন এক রাত, যেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া, শান্তি, এবং সওয়াবের আর্শীবাদ অবিরাম প্রবাহিত হয়। প্রতিটি মোমেন্টের মধ্যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ থাকে, যেখানে বান্দা তাঁর প্রতি একান্তভাবে নিবেদিত থাকে।
আল্লাহর সাথে সম্পর্কের পুনর্গঠন
লাইলাতুল কদরের রাতটি শুধু একটি রাতের ইবাদত নয়, এটি এক নতুন আত্মিক শুদ্ধতার পথ। এটি আমাদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করার একটি অনন্য সুযোগ। এই রাতে দোয়া ও ইবাদত করতে করতে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট এবং প্রার্থনা পৌঁছাতে পারি। এ রাতটি মানুষের আত্মিক উন্নতি ও পরিশুদ্ধি লাভের সুযোগ এনে দেয়, যেখানে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও শান্তি কামনা করে।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর।
আমার বার্তা/জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান/এমই