আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম (রাঃ) ছিলেন একজন মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি ছিলেন জন্মান্ধ। এতদ সত্ত্বেও তিনি ইসলামের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। তাঁর মর্যাদা এতই উচ্চ যে, স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে সুরা আবাসায় কয়েকটি আয়াত নাজিল করেছেন।
আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস প্রমাণ করে, প্রকৃত শক্তি মনের গভীর বিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ে নিহিত। মহানবী (সা.)-এর প্রিয় সাহাবিদের একজন হিসেবে, তিনি শুধু ইবাদতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও পালন করতেন।
রাসুল (সা.) যখন মদিনার বাইরে থাকতেন, তখন এই অন্ধ সাহাবীর হাতেই মদিনার সমস্ত শাসনভার ছিল, যা তাঁর মর্যাদার অনন্য স্বীকৃতি। এই সম্মান প্রমাণ করে, প্রকৃত নেতৃত্ব আসে জ্ঞান, চরিত্র ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে; বাহ্যিক কিছুতে তা নির্ধারিত হয় না।
একদিন মহানবী (সা.) মক্কার কিছু অভিজাত মুশরিকদের নিয়ে দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখন উম্মে মাকতুম (রাঃ) কিছু জানতে নবীজির (সা.) দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দৃষ্টি আকর্ষণে বিলম্ব হলে, আল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে জিবরাইল (আ.) মারফত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে উম্মে মাকতুমের বিষয়ে কয়েকটি আয়াত নাজিল করেন।
এসকল আয়াতে শুধু উম্মে মাকতুম (রাঃ)-এর সম্মান বাড়েনি, বরং তা সমগ্র মুসলিম সমাজকে শারীরিক সীমাবদ্ধ মানুষের প্রতি অগ্রাধিকার ও সম্মান প্রদানের এক অনন্য শিক্ষা দিয়েছে।
উম্মে মাকতুম (রাঃ)-এর আত্মত্যাগের কাহিনী ইসলামের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। দৃষ্টিহীনতা তাঁকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি যুদ্ধের ময়দানেও ছিলেন অকুতোভয়। কাদিসিয়া যুদ্ধে ইসলামের পতাকা হাতে নিয়ে সম্মুখসারিতে লড়েছিলেন এবং শাহাদাত বরণ করেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উম্মে মাকতুমের সাহস, আত্মনিবেদন ও ভালোবাসা প্রমাণ করে যে, একজন সত্যিকারের মুমিনের জন্য কোনো বাধাই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তিনি ইসলামের ইতিহাসে কেবল একজন মুয়াজ্জিন বা শাসক নন, বরং সাহস ও ঈমানের এক অনন্য প্রতীক।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি, সিলেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
আমার বার্তা/ডা. সাঈদ এনাম/এমই