মারা যাওয়ার এক মাস আগে থেকে বেশকিছু 'প্যারানরমাল' সমস্যায় ভুগতেছিল সুমাইয়া। এ কারণেই সুমাইয়াকে আম্মা কবিরাজের কাছে নিয়ে গেছে। নাহলে আমরা জীবনেও কবিরাজের কাছে যেতাম না। এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সুমাইয়ার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম আল আমিন।
তিনি আরও বলেন, কবিরাজ আমার আম্মাকে মা, সুমাইয়াকে বোন আর আমাকে ভাই ডেকে আম্মার বিশ্বাস অর্জন করেছে।
হত্যার আগের দুইদিন সুমাইয়া অনেক বেশি অস্বস্তি অনুভব করতেছিলো। সে বাসায় অদৃশ্য কিছুর উপস্থিতি টের পেত। বাসায় এক ধরনের বিচ্ছিরি গন্ধ পেয়। আম্মা বলেছিল বাসায় লম্বা একটা সোনালী চুলও পেয়েছে। সুমাইয়া রাতে ঘুমাতে পারতো না, ফজরের পর ঘুমাতো। এসবের মধ্যেই সে পরীক্ষা দিয়েছে। সে আল্লাহর নাম নিতে পারতো না। হিজাব পরতে অস্বস্তি বোধ করতো। দেয়ালে কোনোকিছুর ছায়া দেখতে পেত।
হত্যার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। আমি আম্মাকে সকাল ৯টায় ফোন দিলাম ওষুধের কথা জানতে। আম্মা ওষুধের কথা বলে তড়িঘড়ি করে কল কেটে দেন। আম্মার সাথে কথা বলার সময় আমি কল কাটি কিন্তু সেদিন আম্মা অনেক তাড়াহুড়ো করে কল কেটে দেন। আমি আবার ১২ টায় কল দেই তখন মোবাইল বন্ধ পাই। আম্মা স্বভাবত মোবাইল চার্জ দেয় না তাই আমি ভাবছিলাম চার্জ নেই তাই মোবাইল বন্ধ। আমি আম্মাকে পোলাও রান্না করার জন্য বিকাল ৫.৩০ টায় ফোন দিলাম তখনও মোবাইল বন্ধ পেয়েছি। সেদিন আম্মা কাজের মহিলাকেও আসতে মানা করেন।
সুমাইয়ার আরেক বান্ধবী রাহী (ছদ্মনাম) বলেন, সে আমাকে প্রায়ই বলতো ওরে জ্বিনে ধরছে। ওর শরীর জ্বালাপোড়া করে। বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছা করে না। ওর শরীর খারাপ লাগে।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লার কালিয়াজুরী এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই সন্ধ্যায় মোবারক হোসেন নামের একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পেশায় তিনি একজন কবিরাজ। সম্প্রতি তিনি ১৪৪ ধারায় সুমাইয়া ও তার মায়ের হত্যার জবানবন্দী দেন। সেখানে তিনি বলেন, হত্যার আগে সুমাইয়াকে ধর্ষণ করেছিলেন তিনি। মূলত, ঝাড়ফুঁক করে সুমাইয়াকে বশে এনে তাকে প্রথমে ধর্ষণ করেন মোবারক। ঘটনাটি দেখে ফেলেন সুমাইয়ার মা। তাই তার মাকে হত্যা করেন তিনি। এরপর সুমাইয়ার কাছে আবার যান মোবারক। তখন সুমাইয়া বাঁধা দিলে তাকেও হত্যা করেন তিনি।
পুলিশের মিডিয়া শাখার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিক্টিম সুমাইয়া আফরিনকে কথিত জ্বীনে ধরায় বাবুস সালাম জমিরিয়া মাদরাসার পীর ইলিয়াস শাহ এর কাছে ঝাড়ফুঁক করাতে নিয়ে যেতেন সুমাইয়ার মা। সেখানেই আসামী মোবারকের সাথে পরিচয় হয়। ভিক্টিম পরিবারে ঝাড়ফুঁকের নামে আসা-যাওয়া করতেন মোবারক।
এদিকে মোবারকের নামে পূর্বেও একটি ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০২৩ সালের ২৪ জুন কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর পশ্চিম চৌমুহনীতে অবস্থিত হযরত খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানার একটি কক্ষে মোহনা আক্তার মুন্নী নামের ৭ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
বাবুস সালাম জমিরিয়া দরবার শরীফের পীর ইলিয়াস শাহ থেকে কবিরাজি আয়ত্ত্ব করেন মোবারক। তিনি বন্ধ্যা, বিয়ে না হওয়া, বিবাহ বিচ্ছেদ, মেয়েদেরকে বশ করা এসব তদবির করতেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
আমার বার্তা/জেএইচ